ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫

গাজায় যুদ্ধবিরতির আশ্বাস ট্রাম্পের

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৫, ১২:৩৩ এএম

বর্বরতার সব সীমা ছাড়িয়ে এবার পানির জন্য লাইনে অপেক্ষায় থাকা তৃষ্ণার্ত শিশুদের ওপরও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার বলেছেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিগোষ্ঠী হামাসের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি শিগগিরই হতে পারে বলে তিনি আশাবাদী। মারিল্যান্ডের জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘গাজা নিয়ে আমরা কথা বলছি, আশা করি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই বিষয়টি মীমাংসা হবে।’ এর আগে ট্রাম্প জানান, গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব কাতার ও মিসরের মাধ্যমে হামাসের কাছে পাঠানো হয়েছে, তা ইসরায়েল মেনে নিয়েছে। হামাস ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতির আলোচনায় আগ্রহী এবং বন্দি বিনিময়ের ব্যাপারে আলোচনায় প্রস্তুত। যদিও ইসরায়েল বলেছে, হামাসের কিছু সংশোধনী তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, তারপরও ইসরায়েলি প্রতিনিধিরা দোহায় আলোচনায় অংশ নিতে গেছেন। দোহার আলোচনায় ৬০ দিনের একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি, ১০ জন জীবিত ও ১৮ জন নিহত ইসরায়েলি বন্দির মুক্তি এবং স্থায়ী শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। বেশির ভাগ বিষয়ে সমঝোতা হলেও বড় বাধা হিসেবে রয়ে গেছে গাজার চারপাশে একটি বাফার জোনের ওপর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ রাখার দাবিকে কেন্দ্র করে মতবিরোধ। রোববার গাজার নুসাইরাত শরণার্থীশিবিরে পানি বিতরণকেন্দ্রে ফেলা ওই বোমায় ৬ শিশুসহ প্রাণ গেছে অন্তত ১০ ফিলিস্তিনির। গাজার কেন্দ্রীয় অংশে পানির জার ভরতে লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় অন্তত ১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬ শিশু রয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১৬ জন, যাদের মধ্যে ৭ শিশু রয়েছে। রোববার (স্থানীয় সময়) আল-নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরে এ হামলা হয় বলে জানিয়েছে জরুরি সেবাদানকারী সংস্থাগুলো। এদিকে সোমবারও কমপক্ষে আরও ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।   চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নিহতদের মরদেহ আল-আউদা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে এবং আহতদের সেখানেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি পানির ট্যাংকারের পাশে খালি জার নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো লোকজনের ওপর ইসরায়েলি ড্রোন থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) স্বীকার করেছে, তারা ইসলামিক জিহাদের এক সদস্যকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছিল, কিন্তু প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে গোলাটি লক্ষ্যের চেয়ে বহু মিটার দূরে গিয়ে পড়ে। তারা আরও জানিয়েছে, ঘটনাটি তদন্তাধীন এবং তারা বেসামরিক মানুষের ক্ষতি এড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকে। অনেক আহত শিশুকে বুকে জড়িয়ে চিৎকার করতে করতে দিগি¦দিক ছুটতে দেখা গেছে অসহায় বাবা-মা ও স্থানীয়দের। অবরোধের কারণে অন্য সব কিছুর মতো, চিকিৎসাসামগ্রীর সংকটে আহতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে বলে জানান আল-আওদা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘একটি ক্ষেপণাস্ত্র পানি বিতরণকেন্দ্রে আঘাত হানার পর আহত রোগীদের ভিড় দেখে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। আহতদের বেশির ভাগই শিশু এবং নারী। আমরা ৭ শিশুসহ ১৭ রোগীকে জরুরি চিকিৎসা দিয়েছি। চিকিৎসাসামগ্রী সংকটে যথাযথ সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।’ ক্ষুধার্তদের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞের মধ্যেই এবার পানির জন্য অপেক্ষায় থাকা গাজাবাসীর ওপরও বোমা ফেলে ৬ শিশুসহ ১০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরায়েলি বাহিনী। এ নিয়ে রোববার (১৩ জুলাই) পুরো গাজায় প্রাণহানির সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। অপুষ্টিতে ভুগে মারা গেছে এক শিশু। আর ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত জিএইচএফ ত্রাণবিতরণ কেন্দ্রগুলোতে হত্যার শিকার হয়েছেন ৮ শতাধিক ফিলিস্তিনি। অবরোধের কারণে ভয়াবহ সংকটের বিষয়ে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। এমন পরিস্থিতিতে আগামী সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে আশ্বস্ত করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নুসাইরাত শরণার্থীশিবিরে পানি বিতরণকেন্দ্রসহ পুরো গাজা উপত্যকায় চালানো আগ্রাসী হামলায় রোববার শতাধিক নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। যার মধ্যে ছিল খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকা ২৮ ক্ষুধার্ত। ২৭ মে মাসে ত্রাণ বিতরণ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র-ইসর য়েল সমর্থিত জিএইচএফ কেন্দ্রগুলোতে হত্যার শিকার হয়েছে ৮ শতাধিক ফিলিস্তিনি, আহত ৫ হাজার ২৫০। গাজার বাসিন্দারা বলেন, ‘গাজায় কোনো নিরাপদ স্থান নেই। ইসরায়েলিরা আমাদের বলেÑ নিরাপদ স্থানে চলে যাও। কিন্তু তারা সবখানে আক্রমণ চালায়। কার্যত কোনো এলাকায় নিরাপত্তা নেই। খাবার নেই। আমরা শাক-সবজিও কিনতে পারছি না। কারণ, এগুলোর দাম অনেক বেশি। মাংস তো পাওয়াই যায় না। আমার ছেলের পোড়া ক্ষত সারাতে যে পুষ্টির প্রয়োজন, সেই চাহিদা মেটাতে পারছি না। ওষুধও ঠিকমতো পাওয়া যায় না।’ ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। এক ব্যস্ত বাজার এবং একটি পানি বিতরণকেন্দ্রে হামলায় অন্তত ৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এতে করে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় মৃতের সংখ্যা ৫৮ হাজার ছাড়িয়েছে। খবর আলজাজিরার। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রোববার গাজা সিটির একটি বাজারে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে বিশিষ্ট চিকিৎসক আহমেদ কান্দিলও ছিলেন।