বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে ইন্টারন্যাশনাল ও জেডটিই করপোরেশনের বিরুদ্ধে। সরকারি কাজ পেতে প্রয়োজনে বিভিন্ন ‘আনফেয়ার প্রসেস’ (অসদুপায়) অনুসরণেরও অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে। গত বছরের ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর গত এপ্রিল পর্যন্ত শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত দুই প্রতিষ্ঠান থেকেই প্রায় ১৮৫ কোটি টাকার কার্যাদেশ পেয়েছে হুয়াওয়ে ও জেডটিই।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সরকারি আমলাদের বিদেশ সফরের প্রলোভন দিয়ে এসব কাজ পাওয়ার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।
আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমা বিশ্বের বাজারে চীনা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা অনেকাংশেই সংকুচিত, তাই বাংলাদেশের মতো বড় বাজারে ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে জেডটিই এবং হুয়াওয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী না হওয়ায়, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রতি নির্ভরতা বাড়ছে বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের বাজার চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়টি ব্যাখা করেন টেলিকম খাতে দীর্ঘ ক্যারিয়ার গড়া সুমন আহমেদ সাবির।
টেলিকম বিশেষজ্ঞ সুমন সাবির রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘হুয়াওয়ে এবং জেডটিই চীনা প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর বাজারে ঢুকতে পারে না। ইউরোপের অনেক দেশে, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে হুয়াওয়ে নিষিদ্ধ। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের মতো এশিয়ার কিছু দেশ এবং আফ্রিকা তাদের বড় বাজার। বাংলাদেশের টেলিকম সংশ্লিষ্ট বাজারের (যন্ত্র ও সেবা) ৮০ শতাংশই চীনাদের দখলে, বিশেষ করে হুয়াওয়ে এবং জেডটিইর। তারা জানে কীভাবে ব্যবসা করতে হয়।
জেডটিই: গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মাত্র চার মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে টেলিটক এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেড (বিটিসিএল) থেকে চারটি কার্যাদেশে ৬৯ কোটি ৭১ লাখ ১৪ হাজার ৯২৯ টাকার কাজ পেয়েছে জেডটিই। এর মধ্যে বিতর্কিত বিটিসিএলের ‘ফাইভজি উপযোগীকরণে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন (৫জি রেডিনেস)’ প্রকল্পের ২৪ কোটি ৮১ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি দরপত্রও রয়েছে। গত ৪ ডিসেম্বর এই কার্যাদেশ পায় প্রতিষ্ঠানটি। বাকি তিনটি কার্যাদেশ দিয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর টেলিটক। এগুলোর প্রথম দুটি দেওয়া হয়েছে গত ২৪ ডিসেম্বর এবং সর্বশেষটি দেওয়া হয় গত ১৭ মার্চ।
বিটিসিএলের ‘আইপি’ প্রকল্পের আওতায় জেডটিই’র অর্থে গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সিঙ্গাপুর এবং চায়না সফর করেন প্রতিষ্ঠানটির চার কর্মকর্তা। তারা হলেন তৎকালীন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল করিম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উপসচিব রফিকুল ইসলাম, প্রকল্পের উপপরিচালক শাহিন ইকবাল আঁখি এবং ব্যবস্থাপক আনোয়ার পারভেজ।
তারও আগে ২০ থেকে ২৮ ডিসেম্বর জেডটিই’র অর্থায়নে অস্ট্রিয়া সফর করেন তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের (পিটিডি) সচিব মুশফিকুর রহমান, তার একান্ত সচিব (উপসচিব) মোকলেছুর রহমান, বিটিসিলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনোয়ার হোসেন এবং আইপি প্রকল্পের পরিচালক মামুনুর রশীদ। এ ছাড়াও গত মার্চে স্পেনের বার্সালোচনায় অনুষ্ঠিত ‘মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস’ এ টেলিটকের তিন কর্মকর্তা মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম (ক্রয়) এবং খাইরুল আমিনের (অর্থ ও হিসাব) খরচও বহন করে জেডটিই।
শুধুু অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই নয়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের সময়েও সাবেক মন্ত্রী ও আমলাদের সঙ্গে যোগসাজশে সরকারি কাজ পাওয়ার নজির রয়েছে জেডটিই’র। আওয়ামী পরিবার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার রেডিসন ডিজিটাল টেকনোলজিসের কর্ণধার দেলোয়ার হোসেন ফারুক কমিশনের ভিত্তিতে কাজ পাইয়ে দিতেন জেডটিই’কে। জেডটিই’র সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চার করে আওয়ামী আমলে বিটিসিএলের ‘এমওটিএন’সহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করেছেন দেলোয়ার ফারুক।
এমনকি বিটিসিএলের আলোচিত ৫জি প্রকল্প না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামানকে নানাভাবে হয়রানি করে জেডটিই। এসব বিষয়ে বেশ কয়েকভাবে চেষ্টার পরও জেডটিই’র পক্ষ থেকে বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তার মাধ্যমে তাদের যোগাযোগ বা জনসংযোগ বিভাগের মাধ্যমে বক্তব্য পাওয়ার চেষ্টা করেও, সেটি সম্ভব হয়নি। ৫ আগস্টের পর থেকে দেলোয়ার ফারুক কানাডায় অবস্থান করায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
হুয়াওয়ে: চীন সরকারের মালিকানা থাকা জেডটিই’র তুলনায় কোনো অংশে পিছিয়ে নেই দেশটির বেসরকারি খাতের আরেক কোম্পানি হুয়াওয়ে। গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৯ মাসে শুধু টেলিটক থেকেই ছয়টি পৃথক কার্যাদেশে প্রায় ১১৫ কোটি ২৫ লাখ ৫১ হাজার টাকার কাজ পায় হুয়াওয়ে। শুধু দুটি প্রকল্প কার্যালয় থেকেই এই ছয়টি (৪+২) কাজ পায় প্রতিষ্ঠানটি, যার তিনটিই আবার দেওয়া হয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর।
পিটিডির সাবেক সচিব মুশফিকুর রহমানের তৎকালীন একান্ত সচিব মোকলেছুর রহমানের স্পেন সফরের অর্থায়নে ছিল হুয়াওয়ে। বিটিআরসির সাবেক এক মহাপরিচালকসহ চারটি কার্যাদেশ দেওয়া প্রকল্পের পরিচালক এ এম আখতারুল ইসলামের চীন সফরের অর্থায়নেও ছিল প্রতিষ্ঠানটি। শুধু টেলিটক নয় বরং টেলিকম খাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান যেমন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কর্মকর্তাদেরও বিদেশ সফরে প্রায়ই অর্থায়ন করে হুয়াওয়ে।
জেডটিই বনাম হুয়াওয়ে: এদিকে আধিপত্য বিস্তারে জেডটিই এবং হুয়াওয়ের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে বিটিসিএলের ৫জি রেডিনেস প্রকল্পের ‘প্যাকেজ নং-জিডি-০১’ দরপত্র নিয়ে। ১২৬ টেরাবাইটের যন্ত্রপাতি ক্রয়ের কার্যাদেশ পেতে তৎপর ছিল দুটি প্রতিষ্ঠানই। তবে শেষ পর্যন্ত ২০২৩ সালের নভেম্বরে ২৬ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ৩১ কোটি ১০ লাখ টাকা মূল্যের কাজটি শেষ পর্যায় পায় হুয়াওয়ে।
হুয়াওয়েকে কাজটি দিতে সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের বিশেষ আগ্রহের বিষয়টি তখন মন্ত্রণালয়ের ‘ওপেন সিক্রেট’ বিষয় ছিল। হুয়াওয়ে’কে কাজ দিতে সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সাথেও বিরোধে জড়ান আবু হেনা। অবশ্য তারা কেউই প্রভাবশালী সচিবের সাথে পেরে ওঠেননি। পদাধিকার বলে বিটিসিএলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন আবু হেনা।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের সাবেক এক কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এই দরপত্রে শুরু থেকেই নীতিগত সমস্যা ছিল। যে কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) মূল্যায়ন সভায় কয়েক দফায় এর পুনঃদরপত্র আহ্বানের কথা উঠেছিল। সিপিটিইউ পর্যন্ত অভিযোগ ছিল। কিন্তু সচিবের একক আগ্রহে বিষয়টি এগিয়ে যায়। কিছু সংস্থা সরাসরি মন্ত্রণালয়ের তথা সরকারের অধীন যেমন বিটিআরসি, টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর; এগুলোর প্রধান হচ্ছেন মন্ত্রী। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো থাকে সচিবের অধীন, কারণ পদাধিকার বলে সচিব সেগুলোর পর্ষদের প্রধান। এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছেন আবু হেনা’।
হুয়াওয়ের সঙ্গে জব্বারের সময়ে বিটিসিএলের চুক্তি হলেও, যন্ত্রপাতি আমদানিতে হুয়াওয়ের অনুকূলে ‘এলসি (লেটার অব ক্রেডিট’) নিয়ে বিপত্তি বাঁধে পলকের সময়ে। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ২৪ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের প্রথম বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সংক্রান্ত সভায় উপস্থিত হয়ে হুয়াওয়ের অনুকূলে এলসি খোলার অনুমতির সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেন পলক।
“জিডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন না করলে বিটিসিএলের কী কী সমস্যা বা ক্ষতি হতে পারে এবং প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করা হলে বিটিসিএলের কী কী সুবিধা বা লাভ হবে সে বিষয়ে যৌক্তিকতাসহ একটি ‘রাইট আপ’ বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং পিডি প্রেরণ করবেন” মর্মে সভায় সিদ্ধান্ত জানান তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী পলক।
প্রতিমন্ত্রী বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক এ প্যাকেজের বিপরীতে এলসি খোলার জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ড প্রদানের বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশনা প্রদান করবেন এবং সচিব এ বিষয়ে তৎকালীন (প্রধানমন্ত্রীর) মুখ্যসচিবের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করবেন মর্মেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে প্রতিমন্ত্রীর এই নির্দেশনা ফেলে দিয়ে সভার কার্যবিবরণী প্রকাশ করেন সচিব আবু হেনা।
পলকের স্বাক্ষরিত এবং প্রকাশিত ভিন্ন দুটি কার্যবিবরণীই রয়েছে রূপালী বাংলাদেশের কাছে। যদিও পরবর্তীতে পলককে ‘ম্যানেজ’ করেই আওয়ামী শাসনামলেই হুয়াওয়েকে এলসি খোলার অনুমতি দেয় বিটিসিএল।
তবে বিপত্তি বাঁধে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি সংক্রান্ত ‘ফ্যাক্টরি প্রিমিসেস এক্সেপটেন্স টেস্ট’ বা এফপিএটি সম্পন্ন নিয়ে। দুর্নীতি দমন কমিশনে এই কাজ নিয়ে তদন্ত চলমান থাকায় এবং ঠিকাদারের অর্থায়নে বিদেশ সফরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকায় চীন সফর করতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট আমলারা। গত সেপ্টেম্বরে একবার এবং সর্বশেষ গত এপ্রিলেও শেষবারের মতো কর্মকর্তাদের চীন সফরের আয়োজন করে বিটিসিএল’কে চিঠি দেয় হুয়াওয়ে। কিন্তু কোনোবারই এই সফর চেষ্টা সফল হয়নি। এই পর্যায়ে হুয়াওয়ের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের চীন সফর।
গত ৬ থেকে ১০ মে চাইনিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন মেম্বারস ইন বাংলাদেশের খরচে নিজের একান্ত সচিব এএসএম জামশেদ খন্দকারসহ চীন সফর করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এই সংগঠনের সদস্য হুয়াওয়ে। পরবর্তীতে গত ২৫ মে এফপিএটি ছাড়াই হুয়াওয়ের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি আমদানির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে বিটিসিএলের এমডি’কে চিঠি দেয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
বিভাগের উপসচিব মৌরীন করিম স্বাক্ষরিত ওই চিঠি, বিশেষ সহকারীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে মর্মেও উল্লেখ করা হয়। তবে এই চিঠিতে বিদেশ সফর বাবদ উদ্ধৃত ৪২ লাখ ৯০ হাজার ২৮০ টাকা ৫৩ পয়সা হুয়াওয়ের থেকে ফেরতের উদ্যোগ গ্রহণ করতেও বলা হয়। ব্যবসায়ী সংগঠনের অর্থে বিদেশ ভ্রমণের পর সংগঠনের সদস্য প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চিঠি দেওয়াকে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বলছেন বিশ্লেষকেরা। বর্তমানে আমদানি করা যন্ত্রপাতি কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের চেষ্টায় রয়েছে হুয়াওয়ে।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে গত সোমবার থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে বিশেষ সহকারী ফয়েজ তৈয়্যবের সঙ্গে। তার ব্যবহৃত দেশীয় ০১৩০৯৫ নম্বরে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। যোগাযোগের কারণ উল্লেখ করে ক্ষুদেবার্তা দেওয়ার পর প্রতিবেদকের নম্বরও ‘ব্লক’ করেন বিশেষ সহকারী ফয়েজ। একই নম্বরের হোয়াটস অ্যাপে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি তার সঙ্গে।
তবে ইমেইল বার্তায় হুয়াওয়ের দক্ষিণ এশিয়া কার্যালয়ের এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান তানভীর আহমেদ জানান, ‘উন্নত প্রযুক্তি, সেবা এবং প্রতিযোগিতামূলক মূল্যের জন্য বাংলাদেশ ও বিশ্ববাজারে হুয়াওয়ে একটি সমাদৃত নাম। যেকোনো কোম্পানির জন্য প্রকল্প-নির্ধারিত শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে যেকোনো প্রকল্পে অংশগ্রহণ করার সমান সুযোগ রয়েছে। বিটিসিএল ৫জি রেডিনেস প্রকল্পে হুয়াওয়ে সব দরদাতার মধ্যে সর্বনিম্ন মূল্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে।
এ ছাড়া, সিপিটিইউ এবং অন্যান্য দায়িত্বশীল কমিটি হুয়াওয়ে ও অন্যান্য অংশগ্রহণকারী দরদাতাকে এই দরপত্র প্রক্রিয়ায় যোগ্য হিসেবে রায় দিয়েছে।’
ফয়েজ তৈয়্যবের চীন সফরে হুয়াওয়ের সাথে কোনো সমঝোতা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ‘মিডিয়া রিপোর্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, ফয়েজ আহমেদ তৈয়ব ইতিমধ্যেই দুদকে চিঠি পাঠানোর কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এই প্রশ্নের সাথে সেই ব্যাখ্যার বা বাস্তবতার কোনো মিল নেই।’
এ ছাড়া কারখানা পরিদর্শনে উদ্বৃত্ত অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার প্রশ্নে হুয়াওয়ে জানায়, ‘এ-সংক্রান্ত কোনো বিল জমা দিইনি, তাই অর্থ দেওয়া-নেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসছে না।’ আর আমলাদের বিদেশ সফরে অর্থায়ন প্রসঙ্গে স্থানীয় ও নিজস্ব নীতিমালা মেনে দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের দাবি করে হুয়াওয়ে।