ঢাকা শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

ডিজিটাল ব্যবস্থায় জোর দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক  

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৫, ০২:৩৯ পিএম
তারেক রেফাত উল্লাহ খান ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও (কারেন্ট চার্জ), ব্র্যাক ব্যাংক। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

প্রবাসীদের জন্য আছে আধুনিক ও স্বাচ্ছন্দ্যময় ব্যাংকিং সেবা-তারেক রেফাত উল্লাহ খান
ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও (কারেন্ট চার্জ) ব্র্যাক ব্যাংক।

প্রশ্ন : প্রবাসী বাংলাদেশিরা চলতি অর্থবছরে রেকর্ড রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। রেমিট্যান্সের এ বাজারে ব্রাক ব্যাংকের অংশীদারিত্ব কেমন ছিল? 

রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক রেমিট্যান্স আসা দেশের জন্য অত্যন্ত আশার খবর। ব্র্যাক ব্যাংক রেমিট্যান্স প্রবাহে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। জুলাই ২০২৪ থেকে মে ২০২৫ সময়কালে বাংলাদেশে পাঠানো প্রবাসীদের মোট রেমিট্যান্সের ৭%  এসেছে ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে। এই সাফল্যের অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্বিত। আমরা আধুনিক প্রযুক্তি, নির্ভরযোগ্য মানি ট্রান্সফার সিস্টেম, প্রবাসী এবং তাদের পরিবারের জন্য বিশেষায়িত ব্যাংকিং প্রোডাক্ট এবং দ্রুত সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেছি।

প্রশ্ন : প্রবাসী গ্রাহকদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়ানোর জন্য আপনাদের পরিকল্পনা কী?

গ্রাহকদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়ানোর জন্য আমরা প্রবাসী গ্রাহকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় প্রোডাক্ট ও নতুন নতুন সেবা নিয়ে আসছি। আমাদের এ প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। প্রবাসীরা যাতে দেশের বাইরে থেকে খুব সহজেই অল্প সময়ের মধ্যে অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে পারেন সেজন্য তাদের জন্য ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট চালু করা হয়েছে। এতে প্রবাসীরা আকর্ষণীয় ইন্টারেস্টসহ জীবনবিমা সুবিধা পাবেন।

এ ছাড়াও প্রবাসীদের চাহিদার ভিত্তিতে নতুন নতুন প্রোডাক্ট ও সেবা চালু করা হচ্ছে। ডেবিট কার্ডের ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য এবং অ্যাকাউন্ট ওপেনিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে যাতে গ্রাহকরা ব্যাংকিং অ্যাপ ‘আস্থা’র মাধ্যমে লেনদেন করতে পারেন সেজন্য আমরা প্রবাসী ভার্চুয়াল সেভিংস অ্যাকাউন্ট চালু করেছি। এর মাধ্যমে আমাদের গ্রাহকরা বিদেশে বসেই অ্যাকাউন্ট খুলতে ও ব্যাংকিং লেনদেন করতে পারবেন। 

আগামীতে আমরা আরও মানি এক্সচেঞ্জ, ফিনটেক কোম্পানি এবং বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে পার্টনারশিপ বাড়াতে হবে যাতে প্রবাসীরা খুব সহজেই ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারেন। প্রবাসীদের কাছে আমাদের সেবা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা চালু করা হবে। এ ছাড়াও আমাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে আরও ব্যবহারকারীবান্ধব ও নিরাপদ করা হবে, যাতে প্রবাসীরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে খুব সহজেই ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন : কোন কোন দেশের প্রবাসীরা আপনাদের ব্যাংকের মাধ্যমে বেশি রেমিট্যান্স পাঠান?

বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশ থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসে, যা থেকে বোঝা যায়- বাংলাদেশি প্রবাসীরা কাজের সন্ধানে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছেন এবং সেসব দেশ থেকে তারা নিয়মিত দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।

এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ যেমন- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত, কাতার ইত্যাদি দেশ থেকেই দেশের মোট রেমিট্যান্সের প্রায় অর্ধেক আসে। আমাদের ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহেও এসব দেশগুলোর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

এ ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়া থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেমিট্যান্স আমাদের দেশে আসে, যা দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

প্রশ্ন : প্রবাসীদের জন্য আপনার ব্যাংকে কী ধরনের আমানত ও ঋণ প্রোডাক্ট আছে?

আমাদের ব্যাংকে প্রবাসীদের জন্য আছে প্রবাসী কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, সেভিংস অ্যাকাউন্ট এবং প্রবাসী ভার্চুয়াল সেভিংস অ্যাকাউন্ট। এই অপশনগুলোর মাধ্যমে তারা তাদের বিশেষ প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে খুব সহজেই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। অ্যাকাউন্ট খোলার সঙ্গে সঙ্গে তারা আমাদের ‘আস্থা’ অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই লেনদেন শুরু করতে পারেন। তাদের জন্য আরও আছে ফিক্সড ডিপোজিটস ও ডিপিএস প্রোডাক্টসের সুবিধা।

এ ছাড়া, তাদের পরিবারের জন্য আছে প্রবাসী পরিবার সেভিংস অ্যাকাউন্ট এবং তারা প্রবাসী পরিবার সেভিংস অ্যাকাউন্ট।  অতি সম্প্রতি চালু করা এই দু’টি প্রোডাক্টে গ্রাহকরা জীবনবিমা ও স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা, মাসিক ইন্টারেস্ট সুবিধাসহ আরও সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এ ছাড়াও আছে বিদেশি মুদ্রার ওবিইউ অ্যাকাউন্ট, যেখানে তারা বন্ধন ফিক্সড ডিপোজিটসে পাচ্ছেন আকর্ষণীয় ইন্টারেস্ট রেট। ৫০,০০০ ইএসডি/জিবিপি/ইউরো ইনভেস্ট করলে তারা পাবেন প্রিমিয়াম ব্যাংকিং সুযোগ-সুবিধা। এ ছাড়া প্রবাসীদের জন্য অন্যান্য বিনিয়োগ সুবিধাও রয়েছে।

প্রশ্ন : কেন আপনাদের ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীরা বেশি নিরাপদ মনে করবেন?

ব্র্যাক ব্যাংক আমানতকারীদের আমানতের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করে। শক্তিশালী তারল্য ব্যবস্থাপনার কারণে ব্র্যাক ব্যাংক গ্রাহকের যেকোনো তারল্যের প্রয়োজনীয়তা তৎক্ষণাৎ মেটাতে পারে। পাশাপাশি, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেন, উন্নত গ্রাহকসেবা, এবং প্রতিযোগিতামূলক বিনিময়হার প্রবাসীদের আস্থা অর্জনে সহায়তা করে।

প্রবাসীরা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যাংকিং সুবিধা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়াও তাদের জন্যে আছে আমাদের ডেডিকেটেড হেল্প ডেস্ক যেখানে গ্রাহকরা তাদের বিভিন্ন সার্ভিস ও সমস্যার সমাধান পেয়ে থাকেন । আর ২৪/৭ কল সেন্টা তো আছেই। বাংলাদেশে প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যরা পাবেন ব্যাংকের কল সেন্টারের টোল ফ্রি নম্বরে যোগাযোগের সুবিধা। 

প্রশ্ন : প্রবাসীদের বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে সরকার কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন?

প্রবাসীদের বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। আমরা সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট থেকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ প্রত্যাশা করি: পাসপোর্ট ব্যবহার করে প্রবাসীদের জন্য ই-কেওয়াইসিতে অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করা, কারণ এখনো অনেক প্রবাসীর এনআইডি নেই।

প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যদের (যাদের নিজস্ব আয়ের উৎস নেই) অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য বেনিফিশিয়াল ওনার (বিও) চিহ্নিত করার বাধ্যবাধকতা না রাখা, যেহেতু এ ধরনের পরিবারের কাছে অনেক ক্ষেত্রেই রেমিট্যান্স প্রেরকের পাসপোর্ট বা ওয়ার্ক পারমিট (যা বিও চিহ্নিতকরণের জন্য অপরিহার্য) থাকে না।

বিইএফটিএন ও এনপিএসবি-এর মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর সময় ব্যাংকসমূহকে নির্দিষ্ট ও অভিন্ন কোড অনুসরণ করতে জোর প্রদান করা, যেন সকল লেনদেনের মধ্য থেকে রেমিট্যান্সের টাকা চিহ্নিত করা যায়। প্রবাসীদের জন্য ইনভেস্টমেন্ট প্রোডাক্ট, সেভিংস স্কিম এবং সরকারি বন্ডের ডিজিটাল অ্যাপ্লিকেশন প্রক্রিয়া চালু করা, যেখানে হাতে-কলমে স্বাক্ষরের প্রয়োজন থাকবে না। এসব অনুমতি প্রদান করলে ও উপরে উল্লেখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করলে বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে আরও আগ্রহী হবেন।