২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি)। এরই মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলার রাজনীতি।
সম্প্রতি আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ভাঙড়ের এক তৃণমূল নেতা। এই ঘটনাকে ঘিরে বিভিন্ন মহলে চলছে নানা মতভেদ। কারও মতে এটি বিরোধীদের কাজ, আবার কেউ বলছেন এটি তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বেরই প্রতিফলন।
এই পরিস্থিতিতে বীরভূমের সাঁইথিয়া ব্লকের তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি ইউনুসের বক্তব্য নতুন করে অস্বস্তিতে ফেলেছে দলীয় নেতৃত্বকে। ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় তিনি প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেন।
ইউনুস বলেন, ‘মুসলিম সংখ্যালঘুরা তৃণমূলের জন্য বোমা বাঁধে, আর হিন্দুরা বড় বড় পদে বসে’। এই বক্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই দলীয় অন্দরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
তার অভিযোগ, দলে হিন্দু নেতারা গুরুত্ব পাচ্ছেন, অথচ তাদের নির্বাচনী পারফরম্যান্স আশানুরূপ নয়। অন্যদিকে সংখ্যালঘু কর্মীদের, বিশেষত মুসলিমদের, নাকি শুধু নিচুস্তরে ব্যবহার করা হচ্ছে; অথচ নেতৃত্বে তাদের জন্য কোনো জায়গা নেই। ইউনুস আরও বলেন, ‘যারা নিজের বুথেই হারেন, তারা কীভাবে জেলার দায়িত্ব সামলাবেন?’
তার মতে, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে এ বিষয়ে ভাবা উচিত এবং সংখ্যালঘু নেতাদের গুরুত্ব দিয়ে দলে তাদের উপযুক্ত অবস্থান দেওয়া উচিত। শুধুমাত্র বোমা বাঁধানোর কাজেই নয়, সাংগঠনিক স্তরেও তাদের অংশীদার করা উচিত। তার এই বক্তব্য দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং সংখ্যালঘু প্রতিনিধি সংকটের ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তবে প্রশ্ন উঠছে, ঘরের ভেতরের গোপন দ্বন্দ্ব কি প্রকাশ করে দিলেন ইউনুস? কারণ এর আগেও বোমাবাজির ঘটনায় দলকে বিব্রত হতে হয়েছে। যেমন, কালীগঞ্জ উপ-নির্বাচনের বিজয় মিছিল থেকে ছোড়া বোমায় প্রাণ হারায় ১০ বছরের তামান্না, যা এখনও রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে তৃণমূলকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে।
এদিকে ইউনুসের এই মন্তব্যের জেরে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন চলছে। তবে অনেকের মতে, যদি তাকে বহিষ্কার করা হয়, তাহলে সেটি আরও একবার প্রমাণ করবে যে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই এবং দলটির অভ্যন্তরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও নেতৃত্বসংকট প্রকট।
ইউনুসের বক্তব্য একদিকে যেমন দলের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনকে উসকে দিয়েছে, তেমনি আগামী বছরের নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকের ওপর তার প্রভাব পড়তে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।