ঢাকা শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

তাইওয়ান নিয়ে যুদ্ধ হলে জাপান-অস্ট্রেলিয়া কী করবে, জানতে চায় আমেরিকা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৫, ০৬:১৩ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাতে জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া কী ভূমিকা নেবে তা স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছে পেন্টাগন। এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন শনিবার (১২ জুলাই) প্রকাশ করেছে ফিনান্সিয়াল টাইমস

বিষটির সঙ্গে জড়িত পাঁচ ব্যক্তির বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নীতি সংক্রান্ত আন্ডার-সেক্রেটারি এলব্রিজ কলবি সম্প্রতি জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এই ইস্যুতে জোর দেন।

ফিনান্সিয়াল টাইমস জানায়, এই পদক্ষেপে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে টোকিও ও ক্যানবেরা উভয় দেশই কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এখনও তাইওয়ানকে সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিয়ে কোনো ‘ফাঁকা চেক’ দেয়নি।

এ বিষয়ে একজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা সরাসরি তাইওয়ান-সংক্রান্ত অনুরোধ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও জানান, কলবির আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ‘ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায়সংগত উপায়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার করার প্রচেষ্টা আরও দ্রুততর করা’।

এই আলোচনার অংশ হিসেবে চীনের ক্রমবর্ধমান হুমকির প্রেক্ষাপটে মিত্র দেশগুলোর প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর বিষয়েও জোর দেওয়া হয়েছে। তবে তাইওয়ানকে ঘিরে যুদ্ধ-সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি চাওয়ার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কৌশলিক অবস্থান বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

প্রতিবেদনে একটি সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, ‘তাইওয়ান-সংক্রান্ত সম্ভাব্য পরিস্থিতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত কিছু অপারেশনাল পরিকল্পনা ও যৌথ মহড়া ইতোমধ্যে জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এগিয়ে চলছে।’

তবে সূত্রটি আরও জানান, ‘এই নতুন অনুরোধ টোকিও ও ক্যানবেরাকে কিছুটা বিস্মিত করেছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এখনও তাইওয়ানকে রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো নিরঙ্কুশ প্রতিশ্রুতি দেয়নি।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপটিকে রক্ষার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি দেয় না। যদিও সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চারবার এই নীতি থেকে সরে এসে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের পক্ষে হস্তক্ষেপ করবে; তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্য প্রেসিডেন্টদের মতোই এ বিষয়ে মুখ খুলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের এশিয়া বিশেষজ্ঞ জ্যাক কুপার বলেন, ‘তাইওয়ান ইস্যুতে মিত্রদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি আদায় করা কঠিন, যখন তারা জানেই না যুক্তরাষ্ট্র নিজেই কী করবে। যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাইওয়ান রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেননি তখন অন্য মিত্রদের কাছ থেকে এমন প্রতিশ্রুতি চাওয়া বাস্তবসম্মত নয়।’

এই চাপ মূলত জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে, উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়। একাধিক সূত্র জানায়, মার্কিন পক্ষের সাম্প্রতিক অনুরোধে মিত্র দেশগুলোর কর্মকর্তারা ‘সম্মিলিতভাবে ভ্রু কুঁচকেছেন’।

জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “‘তাইওয়ান জরুরি অবস্থা’ নিয়ে কাল্পনিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন।” তারা উল্লেখ করে, ‘যেকোনো প্রতিক্রিয়া জাপানের সংবিধান, আন্তর্জাতিক আইন এবং অভ্যন্তরীণ আইন ও বিধান অনুসারে ব্যক্তিগত ও নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে নির্ধারিত হবে।’

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও তাইওয়ানের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি চীনের পক্ষ থেকে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে একাধিক সামরিক মহড়াসহ চাপ বাড়ানো হয়েছে, যার পেছনে রয়েছে দ্বীপটির ওপর চীনের সার্বভৌমত্ব দাবি। তবে তাইওয়ান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

প্রসঙ্গত, এলব্রিজ কলবি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রতিরক্ষা দপ্তরের কৌশল ও বাহিনী উন্নয়ন সংক্রান্ত উপ-সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে তিনি পরিচিত, এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মনোযোগ সরানোর পক্ষে জোর দেন।