করাচির ডিফেন্স ফেইজ-৬-এর ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া পাকিস্তানি অভিনেত্রী হুমায়রা আসগরকে শনিবার (১২ জুলাই) লাহোরে দাফন করা হয়েছে। জানাজা ও দাফনের সময় প্রথমবারের মতো মেয়ের মৃত্যু নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন তার বাবা। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে কিছু অজানা তথ্য এবং মৃত্যুকে ঘিরে ছড়িয়ে পড়া নানা গুজব নিয়ে প্রতিক্রিয়া।
জানাজায় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হুমায়রার বাবা বলেন, ‘আমি এসব কিছুই জানি না। এসব তথ্য আমার ছেলের কাছে আছে। আমার কাছে কোনো স্মার্টফোনও নেই, আমি শুধু একটি সাধারণ ফোন ব্যবহার করি।’
গত প্রায় ৯ মাস ধরে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো ব্যাখ্যা না দিলেও তার কথায় পরিষ্কার হয়, প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ও পারিবারিক দূরত্ব ছিল এর পেছনে।
গণমাধ্যমে ছড়ানো সেই খবরও তিনি অস্বীকার করেন, যেখানে বলা হয়েছিল, পরিবার নাকি হুমায়রার মরদেহ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা কখনোই মরদেহ নিতে অস্বীকার করিনি। মেডিক্যাল প্রক্রিয়া তখনো শেষ হয়নি। প্রক্রিয়া শেষ হলেই মরদেহ হস্তান্তর হতো।’
মেয়ের মৃত্যুর তদন্ত হওয়া উচিত কি না এমন প্রশ্নে তিনি শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘আল্লাহ যা চান, সেটাই হবে।’
হুমায়রার এক চাচাতো ভাই জানান, তার বাবা ওই সময় গ্রামের বাড়িতে ছিলেন এবং কিছুদিন আগেই নিজের বোনের মৃত্যুতে শোকাহত ছিলেন। এই কারণেই তিনি হুমায়রার সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন না।
গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) করাচির ইত্তেহাদ কমার্শিয়াল এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে হুমায়রার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আদালতের একজন বেইলিফ বকেয়া ভাড়ার কারণে উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে বারবার কড়া নাড়ার পরও সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। তখনই পচাগলা মরদেহটি পাওয়া যায়।
প্রাথমিক ময়নাতদন্তে জানা যায়, মরদেহ ছিল পচনের চূড়ান্ত স্তরে। বিশেষ করে নিচের অংশে মাংস পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, হুমায়রার মৃত্যু প্রায় ৯ মাস আগেই হয়েছে।
সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয় এবং লাহোরে ধর্মীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হয়। তবে জানাজায় শোবিজ অঙ্গনের কাউকে দেখা যায়নি। এ নিয়ে পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে তীব্র সমালোচনা। অনেকেই বলছেন, একজন অভিনেত্রীর এমন করুণ বিদায়ে সহকর্মীদের অনুপস্থিতি দুঃখজনক।
হুমায়রা আসগরের মর্মান্তিক মৃত্যু, তার পারিপার্শ্বিকতা এবং পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা সমাজে একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এই মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে কি না তা এখনও অনিশ্চিত।