ঢাকা শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মাছের দাম আকাশছোঁয়া, ভরা মৌসুমেও ইলিশ অধরা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম
ইলিশ মাছ বেচাকেনা। ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে মাছের দামও ক্রমেই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। চাল-ডাল, শাক-সবজির দাম আগেই বাড়তি, তার ওপর সব ধরনের মাছের বাজারে আগুন লেগেছে। ভরা মৌসুমেও ইলিশের সরবরাহ কম, তাই দাম আকাশচুম্বী। এতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কাঁচাবাজার আরও অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকার বাজার ঘুরে এবং বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে সামুদ্রিক ও খাল-নদীর বেশ কয়েকটি মাছের দাম কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। সুপারশপগুলোতেও চড়া দামে মাছ বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, আজকের বাজারে কোরাল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়, আইড় ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। চিংড়ি (বাগদা ও গলদা) আকারভেদে ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট চিংড়ির দাম কেজিপ্রতি প্রায় ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা।

খাল-নদী ও চাষের মাছের মধ্যে রুই ও কাতলা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, ছোট আকারের পাবদা ৪০০ টাকা, মাঝারি সাইজের ৫০০-৬০০ টাকা, শিং ৪০০-৫০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৭০০ টাকা, পুঁটি ২০০-২৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩০০-৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০-৩০০ টাকা, নাইলোটিকা ২২-২৮০ টাকা, কৈ ২০০-২২০ টাকা এবং পাঙাস ও সিলভার কার্প ২৫০-২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের চাষের রুই প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। ইলিশের মৌসুম হলেও বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। অল্প যে পরিমাণ আসছে, দাম এত বেশি যে সাধারণ ভোক্তার পক্ষে কেনা প্রায় অসম্ভব। খুচরা বাজারে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৪০০-২৫০০ টাকায়। ৫০০-৭০০ গ্রাম ইলিশ মিলছে ১৫০০ টাকায়, এক কেজির কিছু কম ওজনের ইলিশ ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকায় এবং বড় ইলিশ (২ থেকে ২.৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৩০০০-৩৫০০ টাকায়।

আজকের বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ টাকায়, আর সোনালি মুরগির দাম ২৯০-৩২০ টাকা। গত এক মাসে মুরগির কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২০-৩০ টাকা।

অন্যদিকে, গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৫০-৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০-১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পশুর সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় দাম বাড়েনি।

সাধারণ মানুষজন বলছেন, বাজারের সব পণ্যের দাম একসঙ্গে বাড়ায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিক্রেতারা অবশ্য বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় তাদের খুচরা দামে প্রভাব ফেলছে।

রামপুরা কাঁচাবাজারের মাছ কিনতে আসা কাঠমিস্ত্রি বেলাল উদ্দিন বলেন, একমাস আগে যে মাছ ৩২০ টাকায় কিনেছি, এখন সেটি ৪০০ টাকা। বাজারে আসলে মনে হয় সবকিছুর দামই হঠাৎ বেড়ে গেছে।

গৃহিণী সানজিদা হক জানান, মুরগির দাম আগেই চড়া ছিল, ভেবেছিলেন মাছের দিকে ঝুঁকবেন, কিন্তু এখন মাছও হাতের বাইরে। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে।

ইলিশ মাছের বাজার প্রসঙ্গে রামপুরা বাজারের মাছ বিক্রেতা জামাল হোসেন বলেন, মৌসুম হলেও নদীতে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। ফলে সরবরাহ কম, দাম কমানোর সুযোগ নেই।

বনশ্রী এ ব্লক বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মো. রফিক জানান, কয়েক দিন আগের অতিরিক্ত গরমে বিভিন্ন এলাকার পুকুরের মাছ মারা গেছে। এতে চাষিরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখন তারা বেশি দামে মাছ ছাড়ছেন।

অন্য এক মাছ বিক্রেতা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আড়তে সংকট নেই, কিন্তু কোরবানির ঈদের পর থেকেই অনেক বেশি দাম দিয়ে পাইকারের কাছ থেকে মাছ কিনতে হচ্ছে। ফলে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।