ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

হেফাজতে দুই নাগরিকের মৃত্যুতে আসকের গভীর উদ্বেগ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫, ০৭:৩৬ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে দুই নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এ ধরনের ঘটনাসমুহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নাগরিকের নিরাপত্তা বিষয়ক অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলছে।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সিলেটে র‌্যাব-৯ এর হেফাজতে থাকা তানভীর চৌধুরীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেটের জৈন্তাপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৯ অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি গলায় কম্বল পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে র‍্যাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন।

অন্যদিকে, ১৫ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) হাজতখানার একটি কক্ষে মো. মকদ্দুছ মিয়া নামে একজন আসামির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে থানা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা প্রায়শ ঘটছে। গত আগস্টে কক্সবাজারে চকরিয়া থানায় দুর্জয় চৌধুরী, জুলাই মাসে ঢাকার ভাটারা থানায় ফিরোজা আশরাভী এবং জুন মাসে কিশোরগঞ্জে কোটিয়াদী থানায় ফিরোজা বেগমসহ চলতি বছরের শুরু থেকে অন্তত ৭ নাগরিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছেন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে , আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনা সরাসরি মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জবাবদিহিতার অভাবকে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করে। এ ধরনের ঘটনা জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ক্ষুণ্ণ করে এবং সংবিধান প্রদত্ত জীবন ও মানবিক মর্যাদার মৌলিক অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করে।

প্রায়শই লক্ষ্য করা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর মতো গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রমাণ সংগ্রহের যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করে যে, হাজতের মত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। এমন সংবেদনশীল ও তাৎপর্যপূর্ণ স্থানে পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহি ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি করে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করছে যে, হেফাজতে মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনার যথাযথ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করা এবং সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা অপরিহার্য। সিলেট ও মৌলভীবাজারের সাম্প্রতিক ঘটনাসহ এর পূর্বে সংঘটিত সকল হেফাজতে মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, কোনো অবস্থাতেই হেফাজতে মৃত্যু গ্রহণযোগ্য নয়। রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে এ বিষয়ে দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করতে হবে। নাগরিকের জীবন ও মর্যাদা সুরক্ষিত রাখা কেবল সংবিধানগত বাধ্যবাধকতাই নয় বরং মানবাধিকারের মৌলিক শর্ত।