ঢাকা রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

মিত্রদের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্রতর করলেন ট্রাম্প: রয়টার্স

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৫, ১১:০০ পিএম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি- সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে পণ্য আমদানিতে ৩০ শতাংশ শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে এই শুল্ক কার্যকর হতে পারে।

শনিবার (১২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রধান মিত্র ও শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে একটি বড় ধরনের বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চালালেও কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি। এরপরই ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন।

ট্রাম্প ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউমকে পাঠানো দুটি আলাদা চিঠিতে এই শুল্ক আরোপের বিষয়টি জানান। তিনি চিঠিগুলো নিজের ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করেছেন। এতে বলা হয়, ইইউ ও মেক্সিকো যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষায় ব্যর্থ হয়, তবে শুল্ক আরোপ কার্যকর হবে।

ইইউ ও মেক্সিকো উভয়েই ট্রাম্পের এই শুল্ক হুমকিকে ‘অন্যায্য ও বিঘ্নকারী’ বলে অভিহিত করেছে। তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আলোচনায় থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ট্রাম্প ইতোমধ্যে কানাডা, জাপান এবং ব্রাজিলসহ আরও ২৩টি বাণিজ্য অংশীদার দেশকে অনুরূপ চিঠি পাঠিয়েছেন, যাতে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ রয়েছে। বিশেষভাবে তামার ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনাও রয়েছে।

ট্রাম্প জানান, প্রস্তাবিত ৩০ শতাংশ শুল্ক হার ‘সর্বজনীন শুল্ক’ হিসেবে বিবেচিত হবে, যা ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে ৫০ শতাংশ এবং গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কের বিদ্যমান কাঠামোর বাইরে প্রযোজ্য হবে না।

এই সময়সীমা লক্ষ্য দেশগুলোকে নতুন চুক্তির আলোচনার সুযোগ দিলেও, অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে ট্রাম্প তার পুরোনো আগ্রাসী বাণিজ্য নীতিতে ফিরছেন। যদিও এপ্রিল মাসে কিছুটা বিরতি দিয়ে আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, বাস্তবে শুধুমাত্র ব্রিটেন, চীন এবং ভিয়েতনামের সঙ্গে কাঠামোগত চুক্তি হয়েছে।

ইইউ একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তির আশা করলেও এখন কিছু সদস্য রাষ্ট্র কম উচ্চাকাঙ্ক্ষী কাঠামোতে সম্মত হওয়ার পথে।

ট্রাম্প ইউরোপকে লেখা চিঠিতে স্পষ্ট বলেন, ‘বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ইইউকে যুক্তরাষ্ট্রে পূর্ণাঙ্গ ও শুল্কমুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার দিতে হবে।’ ইইউ প্রেসিডেন্ট ভন ডের লেইন বলেন, এই শুল্ক আরোপ ‘আটলান্টিকের উভয় পাশে ব্যবসা, ভোক্তা ও রোগীদের জন্য ক্ষতিকর এবং ট্রান্সআটলান্টিক সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্নিত করবে।’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ইউরোপ চুক্তির লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাবে, তবে প্রয়োজনে সমপর্যায়ের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতেও প্রস্তুত থাকবে।

মেক্সিকোর অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ও শুল্ক হুমকিকে ‘অন্যায্য’ বলে বর্ণনা করেছে এবং জানায়, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বিষয়টি উত্থাপিত হয়।

ট্রাম্পের চিঠিতে উল্লেখ আছে যে, ফেন্টানাইল পাচার নিয়ন্ত্রণে মেক্সিকো যথেষ্ট ভূমিকা রাখেনি। তিনি বলেন, ‘মেক্সিকো সীমান্ত নিরাপত্তায় কিছু করেছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। তারা এখনো মাদক কার্টেল থামাতে পারেনি, যারা পুরো উত্তর আমেরিকাকে মাদকপাচারের খেলার মাঠে পরিণত করছে।’

উল্লেখযোগ্য, মেক্সিকো তার মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায় এবং ২০২৩ সালে দেশটি চীনকে টপকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে ওঠে।

ইইউ এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি তুলনামূলকভাবে নমনীয় কাঠামোগত চুক্তির দিকে ঝুঁকছে, যা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে হওয়া চুক্তির মতো হবে। তবে ব্লকের ভেতরেই মতভেদ রয়েছে যে, জার্মানি দ্রুত চুক্তির পক্ষে থাকলেও, ফ্রান্সসহ অন্য সদস্যরা একতরফা শর্তে চুক্তি চায় না।

ট্রাম্পের শুল্কনীতি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্বে বড় ভূমিকা রাখছে। ট্রেজারি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৪ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত আমদানি শুল্ক থেকে রাজস্ব ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। তবে এতে মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সম্প্রতি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বলেছেন, শুল্কবিরোধ ও ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানের কারণে জাপানকে এখন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। একইভাবে কানাডা এবং কিছু ইউরোপীয় দেশ এখন বিকল্প অস্ত্র ক্রয় ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি তাই শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যেও বড় প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।