ঢাকা রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্বপূর্ণ ৪ ফজিলত

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৫, ০২:২৪ এএম
প্রতীকী ছবি

রাতের নিঃশব্দ অন্ধকারে যখন পৃথিবী ঘুমে ডুবে থাকে, তখন একজন মুমিন আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে চোখের অশ্রু ফেলে দোয়া করেন। এই গভীর রাতের নামাজ—তাহাজ্জুদ হচ্ছে মুমিনের আত্মিক শক্তির শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। কোরআন-হাদিসে এর এত অধিক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে যে, এটি ফরজ নামাজের পর সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত হিসেবে বিবেচিত।

নিচে তাহাজ্জুদের চারটি বিশেষ ফজিলত তুলে ধরা হলো:-

১. পাপ মোচনের মাধ্যম

হজরত আবু উমামা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন- “তোমরা কিয়ামুল লাইল আদায়ে যত্নবান হও। কেননা, তা ছিল তোমাদের পূর্ববর্তী সৎকর্মপরায়ণদের অভ্যাস, এটি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উপায়, পাপ মোচনকারী ও গুনাহ থেকে বিরত রাখে।” (তিরমিজি: ৩৫৪৯) 

তাহাজ্জুদের মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ হয় এবং আত্মা পায় প্রশান্তি।

২. দোয়া কবুল হয়

নবী করিম (সা.) বলেছেন- “আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আসমানের নিচের স্তরে অবতরণ করেন এবং বলেন: ‘কে আছো, আমার কাছে দোয়া করবে? আমি তা কবুল করব। কে আছো, কিছু চাইবে? আমি তাকে তা দান করব। কে আছো, ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।” (বুখারি: ১১৪৫) 

রাতের শেষ অংশে তাহাজ্জুদ আদায়কারীর দোয়া সর্বাধিক গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটা বান্দার জন্য এক স্বর্ণালী সুযোগ।

৩. মর্যাদা বৃদ্ধি পায়

তাহাজ্জুদের মাধ্যমে একজন মুমিনের আধ্যাত্মিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন- “মুমিনের মর্যাদা রাত্রিকালের ইবাদতে নিহিত—যখন সে তাহাজ্জুদের জন্য দাঁড়িয়ে যায়, এবং তার সম্মান নিহিত অমুখাপেক্ষিতার মধ্যে।” (তাবারানি: ৪২৭৮)

এটি আল্লাহর কাছে প্রিয় বান্দা হওয়ার নিদর্শন, যেখানে রাতের নির্জনে সে তাঁর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলে।

৪. জান্নাতের বিশেষ পুরস্কার

তাহাজ্জুদ নামাজ জান্নাতের বিশেষ প্রাসাদ লাভের পথ খুলে দেয়। নবীজী (সা.) বলেন- “জান্নাতে এমন কিছু প্রাসাদ রয়েছে, যার বাইরের অংশ ভেতর থেকে, এবং ভেতরের অংশ বাইর থেকে দেখা যাবে। এসব প্রাসাদ তাদের জন্য নির্ধারিত, যারা—মানুষকে খাবার খাওয়ায়, কোমল ভাষায় কথা বলে, ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখে, সালাম প্রচার করে এবং রাতে লোকজন যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন নামাজে দাঁড়িয়ে যায়।” (মুসনাদে আহমাদ: ২২৯০৫)

এখানে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, তাহাজ্জুদ আল্লাহর কাছে জান্নাত লাভের গুরুত্বপূর্ণ একটি যোগ্যতা।

তাহাজ্জুদের প্রতিটি রাকাআতই বান্দার আত্মাকে আলোকিত করে, হৃদয়কে করে কোমল, ও পাপমোচনের দরজা খুলে দেয়। যারা আল্লাহর নৈকট্য চায়, যারা চায় জান্নাতে মহাসম্মান, তাদের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ একটি অবিচ্ছেদ্য ইবাদত।

আসুন, আমরা গভীর রাতে রবের দরবারে দাঁড়াতে চেষ্টা করি। কারণ—এই নিঃশব্দ রাতই বান্দার কাছে সর্বোত্তম সময়, আর আল্লাহর কাছে প্রিয়তম ইবাদতের মুহূর্ত।