ঢাকা রবিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৫

সুন্দরগঞ্জে চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীনকে পিটিয়ে হত্যা

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ১২:২৫ এএম
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার পর গ্রামবাসীর ভিড়

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলে গরু চোর সন্দেহে আব্দুস সালাম (৫০) নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় দুলালী বেগম (৪৩) নামে এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ। 

শনিবার সকালে উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের তিস্তার চরে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। নিহত আব্দুস সালাম একই ইউনিয়নের রামডাকুয়া গ্রামের ওমেদ আলীর ছেলে। 

স্বজনদের দাবি, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। আটক দুলালী বেগম বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আব্দুল গণি মিয়ার স্ত্রী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার গভীর রাতে আব্দুল গণি মিয়ার গোয়ালঘরে প্রবেশ করেন সালাম। এ সময় বিষয়টি টের পেয়ে দুলালী বেগম স্বামী ও আশপাশের লোকজনকে খবর দেন। পরে স্থানীয়রা সালামকে রশি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে পুকুরপাড়ে রেখে আসেন। ভোরে আবারও তাকে পাশের একটি গোয়ালঘরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। 

অভিযুক্ত আব্দুল গণি মিয়া বলেন, কয়েকদিন আগে শ্যালো মেশিন চুরি গেছে। রাতে গোয়ালে সালামকে দেখি, তাই প্রতিবেশীদের খবর দিই। পরে তারা এসে মারধর করে।

আটক দুলালী বেগম বলেন, এক সপ্তাহ আগে মেশিন হারিয়েছে। রাতে শব্দ শুনে দেখি গোয়ালের বাঁধন খুলছে। পরে লোকজন এসে মারধর করে।

নিহতের স্বজনরা জানান, আব্দুস সালাম দীর্ঘদিন মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং মানুষের সাহায্যেই জীবন চলত। তার বিরুদ্ধে আগে কখনো চুরির অভিযোগ ওঠেনি। 

তারা দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের তিনটি ছোট ছেলে রয়েছে, বাবাকে হারিয়ে তারা এখন চরম অসহায় অবস্থায় পড়েছে।

এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) বিদ্রোহ কুমার কুণ্ডু, সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। 

সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। 

এ ঘটনায় দুলালী বেগম নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে আর কারা জড়িত ছিল, তা শনাক্তে তদন্ত চলছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

এ বিষয়ে বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ জানান, ঘটনাস্থল অত্যন্ত দুর্গম তিস্তা চরাঞ্চল হওয়ায় খবর পেতে দেরি হয়। স্বজনদের বক্তব্য অনুযায়ী নিহত ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।