রাজধানীর পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, পল্টন ময়দানসহ নানা স্থানে অতীতে বহু রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে এবার দলটি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এককভাবে জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে—যা জামায়াতের রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ১৯ জুলাই (শুক্রবার) বেলা ২টায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এটি হবে দলটির ইতিহাসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথম একক রাজনৈতিক জমায়েত।
দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এককভাবে জামায়াতে ইসলামী কখনো জনসভা করেনি। এটি হবে আমাদের প্রথম সমাবেশ।’
তিনি জানান, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা, সংখ্যানুপাতিক (PR) পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন ও তার আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে জনমত গঠন করাই এই সমাবেশের মূল লক্ষ্য।
সমাবেশ বাস্তবায়নে দলের আমিরসহ শীর্ষ নেতাদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ঢাকাসহ সারাদেশে সাংগঠনিক প্রস্তুতি চলছে। দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারকে আহ্বায়ক করে একটি সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটি এবং একাধিক উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের রাজনীতিতে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। এরপর থেকে বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামসহ নানা দল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বড় সমাবেশ করেছে।
জামায়াতও এরই মধ্যে কিছু কর্মসূচি পালন করলেও বড় আকারে সমাবেশের ক্ষেত্রে তারা ছিল অপেক্ষাকৃত নীরব। ২০২৪ সালে কারাবন্দী নেতা (বর্তমানে মুক্ত) এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে পুরানা পল্টন মোড়ে একটি জনসভা ছাড়া রাজধানীতে বড় কোনো একক কর্মসূচি তারা দেয়নি।
তবে ১৯ জুলাইয়ের সোহরাওয়ার্দী সমাবেশ নিয়ে দলটি এবার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং এটিকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখছে।
১৯৪১ সালে পাকিস্তানের লাহোরে প্রতিষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামি ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে একযোগে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার কারণে বাংলাদেশে দলটি নিষিদ্ধ হয়।
পরে ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় দলটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে আব্বাস আলী খানের নেতৃত্বে জামায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে ফিরে আসে এবং ১৯৮০ সালে বায়তুল মোকাররমের সামনে তাদের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কখনো এককভাবে সমাবেশ হয়নি।
জামায়াতের নেতারা জানান, স্বাধীনতা-পরবর্তী ৪৫ বছরে দলীয়ভাবে জামায়াত কখনো এই ঐতিহাসিক স্থানে সমাবেশ করেনি। যদিও বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে সমাবেশে অংশ নিয়েছে তারা।
সম্প্রতি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘শহীদের রক্তস্নাত বাংলায় ইসলামের পতাকা উত্তোলন এবং ইসলামী ঐক্যের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ গড়ে তোলা আমাদের সবার প্রত্যাশা। এই আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে ১৯ জুলাইয়ের সমাবেশ হবে আমাদের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রার নতুন মাইলফলক।’
তিনি এটিকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করে দলীয় কর্মীদের সফল বাস্তবায়নে এখন থেকেই সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।