ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা ঘরে বসে কাজ করার বাস্তবতায় অনেকেই অলস ভঙ্গিতে, যেমন বিছানায় শুয়ে বা সোফায় হেলান দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। আর এই অভ্যাসই ধীরে ধীরে ডেকে আনছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুয়ে শুয়ে বা কাত হয়ে ল্যাপটপ ব্যবহার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নিচে তুলে ধরা হলো এর পাঁচটি বড় ক্ষতি—
মেরুদণ্ডের স্থায়ী ক্ষতি
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে BMP Public Health-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে ৬ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় বসে থাকলে ঘাড়ে ব্যথার ঝুঁকি ৮৮% পর্যন্ত বাড়ে। শুয়ে বা কাত হয়ে কাজ করলে ঘাড়, পিঠ ও কোমরের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ড বাঁকা করে দেয় এবং ডিস্ক স্লিপ বা স্পাইনাল ডিসঅর্ডারের আশঙ্কা তৈরি করে।
চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ
শুয়ে অবস্থায় স্ক্রিনের সঙ্গে চোখের দূরত্ব ও উচ্চতা সঠিক রাখা সম্ভব হয় না। এতে চোখ শুকিয়ে যায়, ঝাপসা দেখার সমস্যা হয় এবং মাথাব্যথা দেখা দেয়। এসব ডিজিটাল আই স্ট্রেইনের লক্ষণ।
ত্বকের ক্ষতি ও আনার স্নায়বিক প্রভাব
ল্যাপটপের অতিরিক্ত তাপে শরীরের সংবেদনশীল অংশে ‘টোস্টেড স্কিন সিনড্রোম’ তৈরি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন কোলের ওপর বা পেটের ওপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করলে ত্বকের রঙ পাল্টে যায় এবং প্রজনন ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি হসপিটাল বেসেলের ১০টি কেস স্টাডিতে এমন নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা দীর্ঘমেয়াদে ত্বক ক্যানসারের সম্ভাবনাও তৈরি করতে পারে।
গলা ও কাঁধের পেশিতে টান
অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে কাজ করলে গলার পেশি শক্ত হয়ে যায় এবং কাঁধে টান ধরে। ফলে ঘাড় ঘোরাতে কষ্ট হয়, মাথা ঘোরা এবং মাইগ্রেনের উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
মনোযোগ নষ্ট ও ক্লান্তি বাড়ে
বিছানা হলো বিশ্রামের জায়গা। এই জায়গায় কাজ করলে মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয়, কাজ ও বিশ্রামের পার্থক্য বুঝতে পারে না। ফলে মনঃসংযোগ নষ্ট হয়, কাজের মান পড়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত বাড়তি মানসিক ও শারীরিক ক্লান্তি ভর করে।
সচেতনতা জরুরি, কী করবেন?
*বিছানা বা সোফার বদলে টেবিল-চেয়ারে বসে কাজ করুন
*ল্যাপটপ বা স্ক্রিন চোখের উচ্চতায় রাখুন
*প্রতি ৩০-৪০ মিনিট পর ৫ মিনিট হেঁটে আসুন
*শোবার জায়গা শুধু ঘুমের জন্য ব্যবহার করুন
*হালকা স্ট্রেচিং ও ব্যায়াম অভ্যাস করুন
*বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট অফিস ডেস্ক বা ঘর নির্ধারণ করুন
স্বাচ্ছন্দ্য ও আরামের আড়ালে লুকিয়ে আছে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ক্ষতি। তাই শুয়ে শুয়ে কাজ করাকে আজই বিদায় জানান। মনে রাখবেন, ভবিষ্যতের সুস্থতা নির্ভর করছে আজকের অভ্যাসের ওপর।