ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫

মিয়ানমারে ৩ শীর্ষ উলফা নেতাসহ নিহত ১৯, ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার ভারতের

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৫, ১২:৩৫ এএম

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) মিয়ানমারে অবস্থিত ঘাঁটিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ড্রোন হামলায় সংগঠনটির অন্তত তিন শীর্ষ নেতা নিহত হয়েছেন। সোমবার ভোরে (১৪ জুলাই) ভারতীয় সেনাবাহিনী এই হামলা চালায় বলে দাবি করেছে উলফা। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী এমন কোনো অভিযানের তথ্য থাকার কথা অস্বীকার করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এই খবর জানায়। এসব বিবৃতিতে উলফা দাবি করেছে, মিয়ানমারে তাদের পূর্বাঞ্চলীয় সদর দপ্তর লক্ষ্য করে সোমবার ভোরে ড্রোন হামলা চালানো হয়। এসব হামলায় তাদের ১৯ জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হয়েছেন। সংগঠনটি বলছে, মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা নাগাল্যান্ডের লংওয়া থেকে শুরু করে অরুণাচলের পাংসাই পাস পর্যন্ত কয়েকটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা হয়। হামলাগুলো হয় রাত ২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে। প্রথম বিবৃতিতে উলফা দাবি করে, তাদের লেফটেন্যান্ট কর্নেল নয়ন মেদ্দি নিহত হয়েছেন। পরের বিবৃতিতে বলা হয়, ব্রিগেডিয়ার গণেশ আসম ও কর্নেল প্রদীপ আসমও মারা গেছেন। মিয়ানমারে ঢুকে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ভারতের সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর গুয়াহাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা কর্নেল এম এস রাওয়াত বলেছেন, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে এ ধরনের কোনো হামলার তথ্য নেই।’ ভারতের নিষিদ্ধ সংগঠন উলফা দাবি করেছে, হামলায় ভারতীয় সেনাবাহিনী ইসরায়েলি ও ফরাসি ড্রোন ব্যবহার করেছে। তবে এনডিটিভি বলছে, ভারত কোনো ধরনের ফরাসি ড্রোন ব্যবহার করে না। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মার বরাতে আসামভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘প্রতিদিন টাইমস’ বলছে, আসামের পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত নয়; আসামের মাটি থেকে কোনো হামলা হয়নি। উলফা আসামের একটি বিদ্রোহী সংগঠন, যারা ১৯৭৯ সাল থেকে আসামের স্বাধীনতার দাবিতে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে আসছে। ভারত সরকার ১৯৯০ সালে উলফাকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। উলফার সঙ্গে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ১৮ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। ভারতে সাঁড়াশি অভিযানের মুখে উলফা নেতাদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশে আত্মগোপন করেছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উলফার ঘাঁটিগুলো নির্মূল করতে শুরু করে। সে সময় উলফার বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা বাংলাদেশে আটক হন। উলফা চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়া, ফরেন সেক্রেটারি শশধর চৌধুরী, ফাইন্যান্স সেক্রেটারি চিত্রবন হাজারিকা ও উপসামরিক প্রধান রাজু বড়ুয়াও সে সময় আটক হন। পরে তাদের ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করেন উলফা নেতারা। বাংলাদেশে আটক উলফার জেনারেল সেক্রেটারি অনুপ চেটিয়াকে দেশে ফেরত পাঠানো হয় ২০১৫ সালে। তিনিও পরে ভারত সরকারের সঙ্গে উলফার আলোচনায় যোগ দেন। দীর্ঘ আলোচনার পর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে উলফার সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে আসাম ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তবে পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন উলফার সবচেয়ে কট্টর অংশটি ওই চুক্তি মেনে নেয়নি। ভোররাতে ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত বরাবর কয়েকটি ঘাঁটিতে স্থানীয় সময় রাত ২টা থেকে ৪টার মধ্যে হামলা হয় বলে দাবি করেছে উলফা (আই)। সংগঠনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, হামলায় তাদের লেফটেন্যান্ট জেনারেল নয়ন মেধি ওরফে নয়ন অসম নিহত হন এবং আরও ১৯ জন আহত হন। পরে নয়নের শেষকৃত্যের সময় ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আরও দুই শীর্ষ সদস্য ব্রিগেডিয়ার গণেশ অসম ও কর্নেল প্রদীপ অসম নিহত হন বলেও দাবি করে সংগঠনটি। বিবৃতিতে স্বঘোষিত সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট ইশান অসমের বরাত দিয়ে বলা হয়, যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে হামলা অব্যাহত রেখেছে। আমরা আসামের আদিবাসী জনগণকে জানাতে চাই, এই ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের বর্বরোচিত হামলার প্রতিশোধ আমরা নেবই।