ঢাকা সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫

‘এখানে আমার স্বামীর মরদেহ রয়েছে কি না দেখতে এসেছি’

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২৫, ০২:০৯ এএম

দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের বিধ্বংসী হামলার পর এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু মানুষের মরদেহ পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গাজা প্রশাসনের অনুমান, এখনো প্রায় ২০ হাজার মানুষ নিখোঁজ। উদ্ধারকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা সীমিত সরঞ্জাম নিয়ে ধ্বংসস্তূপের নিচে মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গাজা শহরসহ আশপাশ এলাকায় ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধারকাজ চলছে ধীরগতিতে। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে গাজার মানুষ ফিরে যাচ্ছে নিজেদের ভাঙাচোরা ঘরে, আগ্রাসন শুরু হওয়ার দুই বছর পর। কিন্তু সেখানে এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, নষ্ট হয়ে গেছে পানি, বিদ্যুৎ ও বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা।

যুদ্ধের আগুনে গাজার জীবনযাত্রা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এদিকে ইসরায়েলের ফেরত পাঠানো অধিকাংশ ফিলিস্তিনি বন্দীর মরদেহই গাজায় এসেছে পচন ধরা ও বিকৃত অবস্থায়। তবে পরীক্ষাগার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে তাদের শনাক্তকরণের পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। আত্মীয়দের মাধ্যমে মরদেহগুলো শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মৃতদের নাম, পরিচয় প্রকাশের জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে গাজাবাসী। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে গত সোমবার থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দির মরদেহ ফেরত দিয়েছে ইসরায়েল। রেড ক্রসের মাধ্যমে সেগুলোকে হস্তান্তর করা হয়। ইসরায়েলি কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মরদেহগুলো নিয়ে এভাবেই গাজার বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসে রেড ক্রসের গাড়ি।

খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের মর্গের চিত্র এটি। ইসরায়েলি কারাগারে নিহত স্বজনদের মরদেহ খুঁজে পেতে এভাবেই সেখানে ভিড় করছে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো। এরই মধ্যে কয়েকজনের মরদেহ শনাক্ত করেছে তাদের আত্মীয়রা। তবে এখনো অধিকাংশ মরদেহেরই শনাক্তকরণ বাকি। সেগুলো পচন ধরা ও বিকৃত অবস্থায় আসায় কর্তৃপক্ষের জন্য তাদের পরিচয় বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিদের মরদেহ শনাক্তে নিযুক্ত চিকিৎসক আহমেদ তাহির বলেন, ‘মরদেহগুলোর পরিচয় নিশ্চিতে আমাদের কাছে ডিএনএ টেস্ট বা অন্যান্য বিশেষায়িত পরীক্ষা করার কোনো সরঞ্জাম ও পরীক্ষাগার নেই। তাই প্রাচীন পদ্ধতিতে, আত্মীয়দের মাধ্যমে মরদেহ শনাক্তকরণ চলছে।’ এদিকে, ইসরায়েলের হাতে আটক অনেক ফিলিস্তিন বন্দির পরিবার হাসপাতালটিতে ভিড় করছেন এটা নিশ্চিত হতে যে মরদেহগুলো তাদের আপনজনের কি না। তারা জানান, মরদেহগুলো রাখার ব্যাগে সংখ্যা দেওয়া আছে, কিন্তু নাম বা পরিচয় কিছুই নেই।

এর মধ্যে এক নারী বলেন, ‘এখানে আমার স্বামীর মরদেহ রয়েছে কি না, তা দেখতে এসেছি। কিন্তু ইসরায়েলের নির্যাতনে সেগুলো এতটাই বিকৃত হয়ে গেছে, চেনা কঠিন। জানি না কীভাবে ওকে শনাক্ত করব, কোথায় যাব, কিছুই বুঝতে পারছি না।’ এই অবস্থায় মরদেহগুলোর নাম ও পরিচয় প্রকাশের জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে রেড ক্রস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানায় ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো।

গাজায় যুদ্ধবিরতির পরও বন্ধ হয়নি ইসরায়েলি আগ্রাসন। গেল ১০ অক্টোবর চুক্তি কার্যকরের পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৭ বার লঙ্ঘন করেছে তেল আবিব। গোলাবর্ষণ, টার্গেট হামলা ও বেসামরিকদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ এনেছে স্থানীয় প্রশাসন। মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, এসব হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে ট্যাংক, ড্রোন ও সেনা যান। শেজাইয়া, আল-তুফাহ ও যায়তুনেসেনা মোতায়েন অব্যাহত রেখেছে নেতানিয়াহু বাহিনী। খান ইউনিস থেকেও সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়নি। এমনকি বেইত লাহিয়া ও বেইত হানুনে এখনও ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে। এই অবস্থার মধ্যে গাজার একমাত্র আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার রাফাহ সীমান্ত খুলে দেয়ার কথা থাকলেও তা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গাজায় বেসামরিক জনগণের ওপর আসন্ন হামলার পরিকল্পনা করছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ তথ্যের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে ‘বিশ্বস্ত তথ্য’ আছে বলে বিবিসি সংবাদ প্রকাশ করেছে। শনিবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে বলেছে, হামাস হামলা চালালে গাজার জনগণকে সুরক্ষা এবং যুদ্ধবিরতির অখ-তা রক্ষায় ব্যবস্থা নেবে তারা।