ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

ইউরোপজুড়ে অভিবাসনবিরোধী নাগরিক টহল বাড়ছে

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ০১:১৬ এএম

ইউরোপজুড়ে ‘নাগরিক টহল’ বা ‘অভিবাসী শিকারি’ নামে পরিচিত কিছু সংগঠিত গোষ্ঠী গঠিত হয়েছে। তারা নিজেদের রক্ষী বাহিনী দাবি করে সীমান্তে টহল দিচ্ছে। তারা আশ্রয়প্রার্থীদের খুঁজে বের করছে এবং মানবাধিকার কর্মীদের হেনস্তা করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই গোষ্ঠীগুলোর উত্থানের পেছনে কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক, কিছু ক্ষেত্রে কৌশলগত এবং কখনো ব্যক্তিগত পর্যায়ে নানা ধরনের জটিল কারণ রয়েছে। লন্ডনের উত্তর-পূর্ব প্রান্তীয় শহর এসেক্সের সাবেক সামরিক ঘাঁটি আরএএফ ওয়েদারসফিল্ডের একজন কর্মী গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময়, কয়েকজন মিলে তার গাড়িটি ঘিরে ধরে।

সেই দৃশ্য আবার মোবাইল ফোনে ভিডিও করা হয়। আর তারা চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘বিশ্বাসঘাতক’। পরিত্যক্ত সামরিক ঘাঁটিটির ওই কর্মীর গাড়ির নম্বর প্রকাশ করে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেয় তারা। মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণের পাশাপাশি পুরো ঘটনাটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয় রক্ষী বাহিনী হিসেবে পরিচিত গোষ্ঠীগুলোর হাজার হাজার অনুসারীদের জন্য। গত মাসে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, এই ‘অভিবাসী শিকারি’ গোষ্ঠীটি ওই সামরিক ঘাঁটিকে আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসন হিসেবে ব্যবহার করার কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছে। এসব গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িতরা সাংবাদিক সেজে আশ্রয়কেন্দ্র ও হোটেলগুলোয় হাজির হয়ে সেখানে কর্মরত ব্যক্তি ও আশ্রয়প্রার্থীদের হয়রানি করেন। এরপর সেই ভিডিও অনলাইনে পোস্ট করেন। আশ্রয়প্রার্থীদের অবস্থান জানিয়ে দেন এবং তাদের অনুসারীদের অভিবাসনবিরোধী প্রতিবাদে অংশ নিতে আহ্বান জানান।

সাবেক সামরিক ঘাঁটিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি জুলাই মাসে শুরু হওয়া অভিবাসনবিরোধী প্রতিবাদের অংশ, যা এখন পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে শুধু ব্রিটেন নয়, ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ‘নাগরিক টহল’, ‘অভিবাসী শিকারি’ বা স্বঘোষিত রক্ষী বাহিনী নামে পরিচিত এসব গোষ্ঠী অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে সীমান্তে টহল দিচ্ছে, আশ্রয়প্রার্থীদের খুঁজে বের করছে বা মানবিক সহায়তাকারীদের হয়রানি করছে।

পূর্ব লন্ডনের মুসলিম অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসে কট্টরপন্থি ইউকে ইন্ডিপেনডেন্স পার্টির (ইউকিপ) বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ মেট পুলিশ। এটি শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। গুরুতর বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় এ সমাবেশ নিষিদ্ধ করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশন থেকে মিছিল হিসেবে প্রথমে ঘোষিত কর্মসূচিটি পরে একই এলাকায় একটি সমাবেশে রূপ দেওয়া হয়। ‘ম্যাস ডিপোর্টেশনস ট্যুর’ নামে বিক্ষোভটি যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় হওয়া একাধিক কর্মসূচির অংশ ছিল। আয়োজকেরা ‘ইসলামপন্থীদের কাছ থেকে হোয়াইটচ্যাপেল পুনরুদ্ধার করতে’ এই বিক্ষোভ কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছেন বলে দাবি করেন।এই বিক্ষোভের জবাবে স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম এবং স্থানীয় কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে একটি পাল্টা বিক্ষোভও আয়োজনের কথা ছিল। মঙ্গলবার পুলিশ জানায়, তারা পাবলিক অর্ডার অ্যাক্ট অনুযায়ী এমন শর্ত আরোপ করেছে, যার ফলে ইউকিপ হোয়াইটচ্যাপেল বা টাওয়ার হ্যামলেটস বরোর অন্য কোথাও বিক্ষোভ আয়োজন করতে পারবে না।

এদিকে এবার অভিবাসন বিরোধী বিক্ষোভ-সহিংসতায় উত্তাল আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিন। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে আলজাজিরা। এতে বলা হয়, ১০ বছর বয়সি এক শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগকে কেন্দ্র করে শুরু হয় প্রতিবাদ আন্দোলন। পরে তা রূপ নেয় সহিংসতায়। মঙ্গলবার সকাল থেকে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হয় শহরের কেন্দ্রে। মিছিল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে তারা। এ সময় তাদের হাতে জাতীয় পতাকা এবং ‘আইরিশ লাইভস ম্যাটার’ ও ‘গেট দেম আউট’ লেখা পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় আন্দোলনকারীরা।