শুল্ক-কর আদায়ে প্রতিবারের মতো এবারও পিছিয়ে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সার্বিকভাবে শুল্ক ও কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৮ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। এনবিআরের হিসাব অনুসারে, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৯৯ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৯১ হাজার ৫ কোটি টাকা। এ সময় রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে সাড়ে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের হালনাগাদ চিত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এনবিআরের কর্মকর্তা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথগতি থাকায় রাজস্ব আদায় তুলনামূলক কম হয়েছে। তবে বছরের শেষ দিকে রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়বে বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, করের আওতা বৃদ্ধি, কর পরিপালন নিশ্চিতকরণ, কর ফাঁকি প্রতিরোধ ও ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব পুনরুদ্ধারের কাজ করছে এনবিআর।
রাজস্ব আদায়ে গতি নেই
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের পুরো প্রথম প্রান্তিকেই (জুলাই–সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আদায়ে গতি নেই। কোনো মাসেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেননি কর ও শুল্ক কর্মকর্তারা। গত জুলাইয়ে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ১১১ কোটি টাকা। কিন্তু জুলাইয়ে আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। ঘাটতি ২ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। পরের মাসে লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৮ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ৩৬ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। ফলে ২ হাজার ৩২২ কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছে।
সব খাতেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও আয়করÑ এই তিন খাতের মধ্যে ভ্যাট খাতে শুধু লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছে আয়কর খাতে। তিন মাসে ঘাটতি হয় ৬ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। এই খাতে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৫ হাজার ২৩ কোটি টাকা। এই সময়ে আদায় হয়েছে ২৮ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। আমদানি খাতে তিন মাসে ৩০ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। এই খাতে ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে ভ্যাট বা মূসক আদায়ের লক্ষ্য পূরণ করেছে। এই খাতের লক্ষ্যের চেয়ে ৭১০ কোটি টাকা বেশি ভ্যাট আদায় হয়েছে। ভ্যাট আদায় হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। এই সময়ে এই খাতের লক্ষ্য ছিল ৩৪ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ জন্য বহুজাতিক সংস্থাটির আরোপিত নানা ধরনের শর্ত মানতে হচ্ছে। এই শর্ত থেকে রাজস্ব খাতও বাদ যায়নি। সে অনুযায়ী, এই খাতে বড় দুটি শর্ত হলো প্রতিবছর জিডিপির দেড় শতাংশ পরিমাণ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে সব ধরনের করছাড় তুলে দিতে হবে এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কৌশল ঠিক করতে হবে।