কখনো তিনি অভিমানী মুখে বলেছেন ‘সে যে কেন এলো না, কিছু ভালো লাগে না’, আবার কখনো লাজুক চাহনিতে নীরব থেকেছেন ‘তুমি যে আমার কবিতা’ গানে। বাংলা সিনেমার অসংখ্য কালজয়ী গানের দৃশ্যে রয়েছেন সারাহ বেগম কবরী। যেগুলো গুনগুন করে এখনো গেয়ে ওঠে এ দেশের মানুষ।
‘বাংলা সিনেমার নায়িকা’-এই কথাটি উচ্চারিত হলে যে কজন নারীর নাম প্রথমেই মুখে আসে, তাদের একজন কবরী। সেই ষাটের দশকে তার আবির্ভাব। নিয়মিতভাবে কাজ করেছেন আশির দশকের শেষ অব্দি। কিন্তু তার সেই মায়াবী রূপ, অনিন্দ্য চাহনি আর নিপুণ অভিনয়; এখনো দাগ কেটে আছে দর্শকদের মনে। সবার কাছে তিনি ছিলেন ‘মিষ্টি মেয়ে’।
আজ ১৯ জুলাই বাংলা সিনেমার ‘মিষ্টি মেয়ে’খ্যাত অভিনেত্রী কবরীর জন্মদিন। কবরীর জন্ম ১৯৫০ সালে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে। তার আসল নাম মিনা পাল। তিনি কবরী সারোয়ার নামে পরিচিত। যা মূলত তার দ্বিতীয় স্বামী গোলাম সারোয়ারের নামের সঙ্গে মেলানো। জন্মদিন উপলক্ষে মিষ্টি মেয়েকে ঘিরে চ্যানেল আইয়ের পর্দায় আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনের বিশেষ সিনেমা উৎসব। আজ বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে প্রচারিত হবে সিনেমা ‘মাসুদ রানা’। আগামীকাল বিকেলে একই সময় দেখা যাবে তার আরেক জনপ্রিয় সিনেমা ‘বধূ বিদায়’। ২০ জুলাই বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে থাকছে কবরীর জীবনের শেষ সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘সাময়িকী’। এটি উপস্থাপনা করবেন আবদুর রহমান। ২১ জুলাই বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে দেখানো হবে কবরীর আরেক ক্লাসিক সিনেমা ‘কত যে মিনতি’। পরিচালনায় ইবনে মিজান অথবা সুভাষ দত্তের ‘বিনিময়’। রুপালি দুনিয়ায় পা রাখার আগে কবরী আত্মপ্রকাশ করেন নৃত্যশিল্পী হিসেবে। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই তিনি মঞ্চে নৃত্য শুরু করেন। তার ঠিক এক বছর পরই ১৯৬৪ সালে কালজয়ী নির্মাতা সুবাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সুতরাং’ সিনেমা দিয়ে রুপালি পর্দায় তার অভিষেক হয়। সেই শুরু, তারপর এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়ের রচনা। কবরী অভিনয় করেছেন দেশের খ্যাতিমান সব নির্মাতার সিনেমায়। তার অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘হীরামন’, ‘ময়নামতি’, ‘চোরাবালি’, ‘সারেং বৌ’, ‘পারুলের সংসার’, ‘বিনিময়’, ‘আগন্তুক’, ‘বাহানা’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘রংবাজ’, ‘বেঈমান’, ‘গু-া’, ‘দেবদাস’, ‘সুজন সখী’, ‘বধূ বিদায়’, ‘দুই জীবন’, ‘দেমাগ’, ‘রঙিন নয়ন মনি’, ‘বিয়ের ফুল’,
‘আমাদের সন্তান’, ‘আয়না’ ও ‘মেঘের কোলে রোদ’ ইদ্যাদি। ঢাকাই সিনেমার জুটি নিয়ে কথা উঠলে কবরীর নাম আসে একদম প্রথমে। রাজ্জাক-কবরী জুটিকে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় জুটি মনে করেন অনেকে। এ ছাড়া কবরীর একটি ব্যতিক্রম রেকর্ডও রয়েছে। তার বিপরীতেই অভিষেক হয়েছিল দেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় পাঁচ নায়কের। তারা হলেন ফারুক, জাফর ইকবাল, আলমগীর, উজ্জ্বল ও সোহেল রানা। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে কবরীর অর্জন বলতে দর্শকদের ভালোবাসা। পুরস্কারের দিক দিয়ে তুলনামূলক তিনি অপ্রাপ্তিতেই রয়েছেন। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে মাত্র একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। অবশ্য এর পেছনে কারণও রয়েছে। তিনি যখন ক্যারিয়ারে তুঙ্গে ছিলেন, তখনো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার চালুই হয়নি! অবশ্য কয়েক বছর আগে তিনি এই পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পেয়েছিলেন।
অভিনয় জীবনের বাইরে কবরী ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।