গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের প্রায় ৪৫ কিলোমিটার এলাকা চরম বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। মহাসড়কের অধিকাংশ স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে যাত্রী ও চালকদের সীমাহীন ভোগান্তির পাশাপাশি প্রায় দিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। একই সঙ্গে বৃষ্টির কারণে গ্রামীণ কার্পেটিং সড়কগুলোও চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দেশের সর্ব দক্ষিণের পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা পর্যন্ত যাতায়াতের একমাত্র পথ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দীর্ঘকাল ধরে ছয় লেনে উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, পদ্মা সেতু চালুর পর এই সরু মহাসড়কে পূর্বের তুলনায় চার গুণ বেশি যানবাহন চলাচল করছে। তাদের মতে, মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত না করেই তড়িঘড়ি করে পদ্মা সেতু চালু করা একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।
এই রুটে চলাচলকারী যাত্রী তারেক মাহমুদ আলী জানান, মহাসড়কে তিন চাকার যানের বেপরোয়া গতি, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সরু মহাসড়কে দূরপাল্লার পরিবহনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়া ওভারটেকিংয়ের কারণে প্রায় প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক দিনের বর্ষায় এই সরু মহাসড়কের অধিকাংশ এলাকা এখন খানাখন্দ ও ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের কারণে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে বরিশাল সদর পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও বিটুমিন উঠে গিয়ে বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে, যা এই ব্যস্ততম মহাসড়ককে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডের জিরো পয়েন্টের মহাসড়কে বিটুমিন উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।
এই রুটে চলাচলকারী পরিবহনচালক রিপন তালুকদার জানান, টরকী বাসস্ট্যান্ডে সড়কের প্রায় ২০ থেকে ৩০ ফুট জায়গাজুড়ে বিটুমিন উঠে যাওয়ায় নিম্নমানের ইট বিছিয়ে সাময়িকভাবে (শেষ পৃষ্ঠার পর)
মেরামত করা হয়েছিল, কিন্তু কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তা-ও উঠে গেছে। ফলে ওই সব স্থান এখন চরম বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া রাস্তার বিভিন্ন স্থানে উঁচু-নিচু টিউমারের মতো ঢেউ উঠেছে, যা যানবাহনের গতিতে প্রভাব ফেলছে এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, গাড়ির চাকা গর্তে পড়লে হঠাৎ ব্রেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড, মদিনা স্ট্যান্ড, দক্ষিণ বিজয়পুর, আশোকাঠি, কাসেমাবাদ, বেজহার, মাহিলাড়া, বাইচখোলা, বাটাজোর, কবিবাড়ী, বামরাইল, সানুহার ও জয়শ্রী বাসস্ট্যান্ড এলাকার মহাসড়কে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচল চরম বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ মাঝেমধ্যে এসব গর্তে নামমাত্র ইটের টুকরো ফেলে মেরামতের চেষ্টা করলেও কয়েক দিনের ব্যবধানে ওই সব ইটের টুকরো উঠে গিয়ে আবার পুরোনো রূপে ফিরে আসায় মহাসড়কের দুর্ভোগ বেড়েছে।
এই রুটে প্রতিনিয়ত চলাচলকারী দূরপাল্লার পরিবহনের চালক, স্টাফ ও সচেতন বরিশালবাসী মনে করেন, এই মহাসড়ক দীর্ঘদিনের পুরোনো এবং বর্তমানে প্রতিনিয়ত চলাচলকারী কয়েক হাজার যানবাহনের ধারণক্ষমতা এটির নেই। এ কারণেই সংস্কারকাজ স্থায়িত্ব পাচ্ছে না।
তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সরু মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার জন্য গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। মহাসড়কের সক্ষমতা হারানোর তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে বরিশাল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে মহাসড়কের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি কমে এলেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে সংস্কারকাজ শুরু করা হবে।