বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট লক্ষ্য করে সাইবার আক্রমণ চালিয়েছে হ্যাকাররা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আরও বেশকিছু সংস্থার ওয়েবসাইটেও সাইবার আক্রমণ হয়েছে। তবে হ্যাকারদের মূল্য লক্ষ্য ছিল মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ‘ট্রোজান ১৩৩৭’ এবং ‘দ্যা রেড ঈগল’ নামক দুইটি হ্যাকার গোষ্ঠী এই আক্রমণে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে এতে আরও বেশ কয়েকটি হ্যাকার গোষ্ঠী যুক্ত রয়েছে। হামলাকারীরা ওয়েবসাইটে আক্রমণের পাশাপাশি প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীর তথ্য পাওয়ারও দাবি করেছে। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন টেলিগ্রাম গ্রুপে আগাম ঘোষণা দিয়েই এসব হামলা চালানো হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দুপুর থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট সাইবার হামলায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
হ্যাকাররা টেলিগ্রাম গ্রুপে প্রায় ১০০ ওয়েবসাইটে সফল হামলার দাবি করেছে এবং বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের ঠিকানাও প্রকাশ করেছে। আক্রান্ত হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েকটির ওয়েবসাইট ‘অকার্যকর’ দেখাচ্ছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে হ্যাকারদের দেওয়া বার্তা ভেসে উঠছে। রাজধানীর রূপনগর সরকারি মাধ্যম বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটটিতে হ্যাকাররা লিখেছেন “হ্যাকড বাই লুসিয়ান ক্রাইজ”।
এছাড়াও সেখানে ফিলিস্তিনের পক্ষে বার্তা দেওয়া হয়েছে এবং ইজরায়েলের মিত্রদের ‘সম্পদ’ এ এমন হামলা অব্যাহত থাকবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। দারুস সালাম সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের ওয়েবসাইটে ‘ট্রোজান ১৩৩৭’ নামক হ্যাকার গোষ্ঠী নিজেদেরকে ভারতীয় হ্যাকার দাবি করেছে। ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে এই হামলা করা হচ্ছে বলে দাবি করে এই গোষ্ঠী।
এদিকে, টেলিগ্রামে ‘দ্যা রেড ঈগল’ নামক হ্যাকার গোষ্ঠী প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে। দাবির পক্ষে তারা কিছু শিক্ষার্থীর তথ্যের স্ক্রিনশটও প্রকাশ করেছে টেলিগ্রামে। এছাড়াও তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেও সফল হামলা করার দাবি করেছে। তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় সেসব ওয়েবসাইট স্বাভাবিক অবস্থায় দেখা গেছে। সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছে, এই দুই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ‘ডিডস (ডিনায়েল অব সার্ভিস’ ধরনের সাইবার আক্রমণ করা হয়েছিল, যা দ্রুতই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আরিফ মঈনুদ্দীন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, “বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে এসব হ্যাকাররা বাংলাদেশে আক্রমণের হুমকি দিচ্ছিল। ‘ওয়েবসাইট ডিফেইসমেন্ট’ ধরনের হামলা চালানো হয়েছে। এই ধরনের আক্রমণে একটা ওয়েবসাইটে হোম পেইজে হ্যাকাররা তাদের একটা ‘সাইনবোর্ড’ প্রকাশ করে। ওয়েবসাইটের দুর্বলতা বেশি থাকলে, এখান থেকে হ্যাকাররা ডাটাবেইজেও ঢুকে যেতে পারে। তেমন দুর্বলতা না থাকলে পারবে না। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যেহেতু শিক্ষার্থীরা অনেক ধরনের কাজ করেন যেমন রেজিস্ট্রেশন, আবেদন ইত্যাদি; সেক্ষেত্রে ঝুঁকি তো থেকেই যায়”।
এধরনের হামলা থেকে ডাটাবেইজে প্রবেশাধিকার নিতে পারলে প্রাপ্ত উপাত্ত হ্যাকাররা ডার্ক ওয়েবে বিক্রি করে থাকেন বলেও জানান আরিফ মঈনুদ্দীন।
এই সাইবার হামলা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত সরকারের কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।