১৯৯৪ সালে জেলা জজ ও জুডিসিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাসদার হোসেন দেশের বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার জন্য মামলা দায়ের করেন। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণের ওই রিট মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয় ১৯৯৯ সালে। ১২ দফা নির্দেশনা সম্বলিত ওই রায়ের আট বছর পর মূল নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করে ২০০৭ সালের পহেলা নভেম্বর অর্থাৎ আজকের দিনে বিচার বিভাগকে আলাদা করা হয়েছিল।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার গোড়াপত্তন ঘটে মাসদার হেসেন মামলার রায়ের আলোকে। সে রায়ের ফলে ১৮ বছর আগে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ করা হয়। এরপর থেকে শুরু হয় বিচার বিভাগের স্বাধীন পথচলা।
নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হলেও দীর্ঘ দেড় যুগেও প্রতিষ্ঠা হয়নি বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয়। তবে বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। এ সংক্রান্ত খসড়া অধ্যাদেশে সম্প্রতি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এখন সচিবালয়ের আর্থিক স্বাধীনতা কার হাতে থাকবে সেই বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের মত নিয়ে তা পুনরায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদে যাবে। সেখানে অনুমোদনের পরই অধ্যাদেশ জারি করবেন রাষ্ট্রপতি। এরপরই তা গেজেট আকারে প্রকাশ করবে আইন মন্ত্রণালয়। গেজেট প্রকাশের পরই জানা যাবে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের অধ্যাদেশে আর্থিক স্বাধীনতা কার হাতে ন্যস্ত থাকছে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ ড. মো. শাহজাহান সাজু বলেন, সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে বিচারিক কাজের পাশাপাশি আর্থিক স্বাধীনতাও নিশ্চিত করতে হবে। বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয়ের আর্থিক স্বাধীনতা না থাকলে ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারের মুখাপেক্ষী থাকতে হবে। আর সরকারের মুখাপেক্ষী হলেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় সরকারের যে অদৃশ্য হস্তক্ষেপ তার প্রভাব পড়বে। সেজন্য পৃথক সচিবালয়ের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। যদি এটা করা সম্ভব না হয় তাহলে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা ও পৃথককরণ কোনোটাই অর্থবহ হবে না।

