চুয়াডাঙ্গায় অধিক লাভের আশায় মুখিকচু চাষে ঝুঁকেছিলেন অনেক কৃষক। কিন্তু মৌসুমের মাঝপথেই কচুর বাজারমূল্য পড়ে যাওয়ায় এখন লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা। খরচ বেশি, ফলন কম এবং বাজারে চাহিদা না থাকায় পুঁজি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা।
জেলা সদর, দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে নিচু জমিতে চাষ করা কচুর পাতা নষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও জমিতে পানি জমে থাকায় কচু তলিয়ে আছে। অনেক কৃষক এখনো ভালো দামের আশায় কচু ঘরে রেখেছেন, কেউ কেউ আবার খুচরা বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
চাষিরা জানান, বিঘা প্রতি মুখিকচু চাষে ৩৫-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। ভালো মানের কচু হলে বিঘায় ৫০-৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাচ্ছে, যা উৎপাদন খরচের তুলনায় খুবই কম।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হিজলগাড়ী গ্রামের চাষি রহমত আলী বলেন, ‘৪০ শতক জমিতে কচু চাষে আমার খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা, সঙ্গে জমির লিজ বাবদ দিতে হবে আরও ২০ হাজার। এক মাস আগে পাইকাররা এক লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বললেও এখন বলছে মাত্র ৬০ হাজার। এতে আমার কোনো লাভ হবে না, বরং ঋণেই পড়তে হবে।’
দামুড়হুদা উপজেলার মদনা গ্রামের আতিয়ার রহমান জানান, ‘দেড় বিঘার মধ্যে অর্ধেক জমি পানিতে ডুবে গেছে। মাটির নিচ থেকে কচু তুলে বাজারজাত করতে অতিরিক্ত শ্রমিক খরচ হচ্ছে। এখন বাজারে প্রতি কেজি কচুর দাম ২৫-৩০ টাকা, যা দিয়ে শ্রমিক খরচই ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না।’
চুয়াডাঙ্গার কচু ব্যবসায়ী হাসিবুর রহমান জানান, ‘বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় কচুর মান কিছুটা খারাপ হয়েছে। অন্যদিকে, বাজারে আলুর দাম কম থাকায় কচুর বিক্রিও কমে গেছে। তবে আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে বাজারে কচুর দাম আবার বাড়তে পারে।’
জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, ‘এ বছর জীবননগরে ৬৩ হেক্টর জমিতে মুখিকচুর আবাদ হয়েছে। বিঘা প্রতি ৯০-১০০ মণ ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বাজারে সবজির দাম কম, শ্রমিক ও উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা আশানুরূপ লাভ করতে পারছেন না। কৃষকদের পরিমিত সার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যাতে জমির উর্বরতা শক্তি রক্ষা পায়।’
আপনার মতামত লিখুন :