রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শহিদুল ইসলাম শুভ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৫, ০১:৩৩ এএম

সঠিক প্রস্তুতিই সাফল্যের চাবিকাঠি

শহিদুল ইসলাম শুভ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৫, ০১:৩৩ এএম

সঠিক প্রস্তুতিই সাফল্যের চাবিকাঠি

শেষ হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। কেউ আনন্দিত, কেউ বা হতাশ। কেউ মনে করছে সব শেষ, আবার কেউ ভাবছে এটাই নতুন শুরুর সময়। আসলে ফলাফল ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন, জীবন থেমে থাকে না। বরং এখান থেকেই শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নতুন লড়াই। এই লড়াইয়ে জয়ী হতে হলে সবচেয়ে জরুরি হলো সঠিক প্রস্তুতি। কারণ, সাফল্যের আসল চাবিকাঠি রেজাল্ট নয়, বরং প্রস্তুতির মান ও দৃঢ় মনোবল।

অনেকে মনে করে ভালো রেজাল্ট থাকলেই ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ভর্তি পরীক্ষায় শুধু বোর্ড পরীক্ষার ফল নয়, বরং পরীক্ষার্থীর ধারণাশক্তি, বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও সময় ব্যবস্থাপনা বেশি গুরুত্ব পায়। অনেক সময় দেখা যায়, যাদের এইচএসসি ফল তুলনামূলক কম, তারাই কঠোর পরিশ্রম ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রস্তুতি নিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় সেরা ফল করে। তাই এই সময়টাতে হতাশ না হয়ে নতুনভাবে নিজেকে গড়ে তোলার মনোভাবই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

সময় ব্যবস্থাপনা

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সময়ের সঠিক ব্যবহার সবচেয়ে জরুরি বিষয়। অযথা চাপ না নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী পড়লে কম সময়েও অনেক কিছু শেখা যায়। সাধারণত দিনে আট থেকে দশ ঘণ্টা পড়া আদর্শ, তবে তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো সময়ের গুণগত ব্যবহার। যেমন সকালবেলায় নতুন অধ্যায় পড়া, দুপুরে অনুশীলন, বিকেলে পুনরাবৃত্তি এবং রাতে মডেল টেস্ট বা রিভিশন। এভাবে সময় ভাগ করে পড়লে পড়াশোনায় ধারাবাহিকতা আসে। প্রতিদিনের কাজের একটি তালিকা তৈরি করে সেই অনুযায়ী পড়লে মনোযোগ বাড়ে এবং সময় অপচয় কমে।

অধ্যয়নের কলাকৌশল 

শুধু বই খুলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা প্রস্তুতি নয়। জানতে হবে কীভাবে কার্যকরভাবে পড়তে হয়। ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন সাধারণত ধারণাভিত্তিক হয়, তাই মুখস্থ করার চেয়ে বিষয়টা বুঝে পড়া জরুরি। যেমন পদার্থবিজ্ঞানের একটি সূত্র মুখস্থ না করে বুঝে নিতে হবে এটি কোথা থেকে এসেছে, কেন এটি ব্যবহার হয়। ইংরেজিতে প্রতিদিন নতুন শব্দ শেখা, প্যাসেজ পড়া এবং গ্রামার অনুশীলন করা দরকার। প্রতিটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে নিজের মতো করে নোট তৈরি করা একটি কার্যকর অভ্যাস। ছোট ছোট ফ্ল্যাশ কার্ডে সূত্র, সংজ্ঞা বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিখে রাখলে পুনরাবৃত্তির সময় অনেক সুবিধা হয়। পড়ার পরদিন সেই বিষয়টি নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলে বোঝার গভীরতা বাড়ে।

বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি

বিজ্ঞান বিভাগ: পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে সূত্র, ধারণা ও সমস্যা সমাধানে দক্ষতা জরুরি। প্রতিদিন অন্তত একটি অধ্যায় গভীরভাবে অনুশীলন করতে হবে। নিয়মিত মডেল টেস্ট দেওয়া এবং ভুলের জায়গা বিশ্লেষণ করাও প্রয়োজন।

মানবিক বিভাগ: ইতিহাস, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা বাংলা সাহিত্যের মূল ধারণাগুলো সংক্ষেপে লিখে রাখলে মনে রাখা সহজ হয়। ব্যাকরণ ও ইংরেজির অনুশীলন প্রতিদিন করা উচিত। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিগত বছরের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করাও ভালো ফল দেয়।

বাণিজ্য বিভাগ: হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় উদ্যোগ ও অর্থনীতির সংখ্যাগত অংশ বেশি অনুশীলন করতে হয়। প্রতিটি অধ্যায় পড়ে তার মূল সূত্র ও পদ্ধতি নিজে হাতে লিখে অনুশীলন করলে মনে গেঁথে যায়।

মডেল টেস্ট

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নিয়মিত মডেল টেস্ট দেওয়া। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মডেল টেস্ট দিলে পরীক্ষার সময় ব্যবস্থাপনা শেখা যায় এবং নিজের দুর্বল দিকগুলো বোঝা যায়। প্রতিটি টেস্ট শেষে ভুলের জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। কেউ চাইলে বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে প্র্যাকটিস টেস্ট দিতে পারে। এতে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হয় এবং শেখার আগ্রহ বাড়ে।

ইতিবাচক মনোভাব

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে মানসিক শক্তি শারীরিক পরিশ্রমের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই ভালোভাবে পড়াশোনা করেও পরীক্ষার হলে নার্ভাস হয়ে পড়ে। এজন্য মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা জরুরি। প্রতিদিন কিছু সময় নিজের পছন্দের কাজ করা, হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি মনকে সতেজ রাখে। আবার পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটালে মানসিক ভারসাম্য বজায় থাকে।

স্বাস্থ্য সচেতনতা

অতিরিক্ত পড়াশোনা শরীর ও মন দুটোকেই ক্লান্ত করে ফেলে। তাই প্রতিদিনের পড়াশোনার মাঝে বিরতি নেওয়া উচিত। ৫০ মিনিট পড়ার পর ১০ মিনিট বিশ্রাম নিলে মনোযোগ বজায় থাকে। পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ শরীর সুস্থ রাখে, যা পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ায়। মনে রাখতে হবে, সুস্থ শরীরই সফল প্রস্তুতির ভিত্তি।

সঠিক দিকনির্দেশনা ও পরিশ্রম

বর্তমানে অনেক কোচিং সেন্টার ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহযোগিতা করছে। তবে অন্ধভাবে কোচিং-এর ওপর নির্ভর না করে নিজের পরিকল্পনাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কোচিং কেবল গাইডলাইন দিতে পারে, কিন্তু সফলতা নির্ভর করে শিক্ষার্থীর নিজস্ব পরিশ্রমের ওপর। অনেকে বাড়িতে বসেও ইউটিউব ক্লাস বা অনলাইন লেকচার দেখে কার্যকর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এগুলোও কাজে লাগানো যেতে পারে। এইচএসসি ফলাফল যাই হোক, সেটাই জীবনের শেষ নয়। বরং এখন থেকেই শুরু হোক নতুন অধ্যায়, নতুন লড়াই। মনে রাখতে হবে, সাফল্য ভাগ্যের নয়, এটি সঠিক প্রস্তুতি ও ধারাবাহিক পরিশ্রমের ফল। আজ যে শিক্ষার্থী নিয়মিত রুটিন মেনে, লক্ষ্য স্থির রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে, আগামীকাল সেই-ই দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গর্বের সঙ্গে ভর্তি হবে। তাই এখন থেকেই সময় নষ্ট না করে প্রস্তুতির পথে নামুন, সঠিক প্রস্তুতিই হবে সাফল্যের চাবিকাঠি।

লেখক: সাবেক প্রভাষক, ব্রাইট টাচ কলেজ, নরসিংদী
অনুলিখন: আরফান হোসাইন রাফি

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!