চলতি বছর এইসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলে অসন্তোষ জানিয়ে রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষার্থী খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন করেছেন। এবার ৪১ দশমিক ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করে, সংখ্যার হিসাবে যা ৫ লাখের বেশি। অপ্রত্যাশিত এ ফল প্রকাশের পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই এবার শিক্ষা বোর্ডগুলোতে খাতা চ্যালেঞ্জের হিড়িক পড়েছে।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সূত্রে জানা গেছে, ১১টি শিক্ষা বোর্ড মিলে ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৫৮ জন শিক্ষার্থী খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেছেন। এই শিক্ষার্থীরা মোট ৪ লাখ ২৮ হাজার ৪৫৮টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের দাবি তুলেছেন।
আগামী ১৬ নভেম্বর এইচএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের ফল প্রকাশ করা হবে। আবেদনকারীদের মধ্যে যাদের ফল পরিবর্তন হবে, তাদের এসএমএসের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফল জানিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া বোর্ডের ওয়েবসাইটে সংশোধিত ফল পাওয়া যাবে।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন করা শিক্ষার্থীর উত্তরপত্রের চারটি দিক দেখা হয়। সেগুলো হলো—উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেওয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কি না এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কি না। এ চার জায়গায় কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধন করে নতুন করে ফল প্রকাশ করা হয়।
বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম কামাল উদ্দিন হায়দার জানিয়েছেন, এবারের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক হওয়ায় স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এবার কোনো বোর্ডেই এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করা হয়নি, সব আবেদন হয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। এবার খাতা পুনর্মূল্যায়নে সর্বাধিক আবেদন পড়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে। এখানে ৬৬ হাজার ১৫০ শিক্ষার্থী ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫০৬টি খাতা পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করেছেন। আর সবচেয়ে কম আবেদন বরিশাল বোর্ডে, মাত্র ৮ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী মোট ১৭ হাজার ৪৮৯টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন।
বোর্ডভিত্তিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদনে ঢাকার পরেই রয়েছে চট্টগ্রাম বোর্ড। এ বোর্ডে ২২ হাজার ৫৯৫ শিক্ষার্থী মোট ৪৬ হাজার ১৪৮টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন। এরপর কুমিল্লা বোর্ড। এখানে ২২ হাজার ১৫০ শিক্ষার্থী ৪২ হাজার ৪৪টি খাতা চ্যালেঞ্জ করেছেন। রাজশাহী ও যশোর বোর্ডে আবেদনকারীর সংখ্যা যথাক্রমে ২০ হাজার ৯২৪ এবং ২০ হাজার ৩৯৫। এ দুই বোর্ডে ৩৬ হাজার ২০৫টি খাতা পুনর্মূল্যায়নের দাবি তোলা হয়েছে। দিনাজপুর বোর্ডে ১৭ হাজার ৩১৮ শিক্ষার্থী ২৯ হাজার ২৯৭টি খাতা আর ময়মনসিংহে ১৫ হাজার ৫৯৮ শিক্ষার্থী ৩০ হাজার ৭৩৬টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন। সিলেট বোর্ডে ১৩ হাজার ৪৪ শিক্ষার্থী ২৩ হাজার ৮২০টি খাতা পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া কারিগরি বোর্ডে ১২ হাজার ৭ জন শিক্ষার্থী ১৫ হাজার ৩৭৮টি খাতা এবং মাদ্রাসা (আলিম) বোর্ডে ৭ হাজার ৯১৬ শিক্ষার্থী ১৪ হাজার ৭৩৩টি খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রতিবারই ফল প্রকাশের পর খাতা চ্যালেঞ্জের ঢল দেখা যায়। এটা মূল্যায়ন ব্যবস্থার অসংগতি নির্দেশ করে। দীর্ঘমেয়াদে পরীক্ষার কাঠামো ও মূল্যায়ন মানোন্নয়ন ছাড়া এ প্রবণতা থামবে না।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন