২০২৪-২৫ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) ৩ হাজার ৩২ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৯১ কোটি মার্কিন ডলার। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২২ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা জেলায়, ১ হাজার ৫৬ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। আর এই সময়ে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে লালমনিরহাটে, ২ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয়ের তথ্য থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে বরাবরের মতো ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোয় প্রবাসী আয়ের প্রবাহ সবচেয়ে বেশি। আর রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম। এদিকে দেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কুমিল্লা জেলায়। গত অর্থবছরের ১১ মাসে কুমিল্লা জেলা থেকে বিদেশে গেছেন ৮৫ হাজার ১৮০ জন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয়ের বিভাগভিত্তিক তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা বিভাগেÑ প্রায় ৫০ শতাংশ। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম (২৭ শতাংশ), সিলেট (৯ শতাংশ), খুলনা (৪.৩৮ শতাংশ), রাজশাহী (৩.৩৫ শতাংশ) ও বরিশাল (২.৭৭ শতাংশ) বিভাগ। আর সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় আসা দুই বিভাগ হলোÑ ময়মনসিংহ (২ শতাংশ) ও রংপুর (১.৫৩ শতাংশ)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসের পর থেকে প্রতি মাসেই প্রবাসী আয় বেড়েছে। জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল, যা বেড়ে আগস্টে ২২২ কোটি ৪২ লাখ ও সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার হয়েছে। অক্টোবর মাসে সামান্য কমে তা ২৩৯ কোটি ডলার হয়েছে। নভেম্বরে এসেছে ২১৯ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। জানুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছে ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। মার্চ মাসে রেকর্ড ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এপ্রিল মাসে এসেছে ২৭৫ কোটি ডলার। মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার এবং জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২৮২ কোটি ১৩ লাখ ডলার।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলোতে যে পরিমাণ আয় আসছে, তার চেয়ে বেশি আসার কথা। কিন্তু অনেক প্রবাসী বিদেশে স্থায়ী হয়ে গেছেন, সে কারণে তা হচ্ছে না। তারা বরং উলটো দেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন এবং এতে অর্থ পাচার বাড়ছে। গত বছরের বেশির ভাগ সময়ে প্রবাসী আয় পরিস্থিতি খুব বেশি ভালো ছিল না। রেমিট্যান্সের সুবাতাসের বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর হুন্ডির মাধ্যমে ডলার পাঠানো কমেছে। এর বদলে অফিসিয়াল চ্যানেলে (ব্যাংকিং) ডলার বেশি পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, রেমিট্যান্সে ডলারের দর বেড়ে যাওয়াই বড় কারণ। মাঝে রেমিট্যান্সের দর বেড়েছে, আবার কমেছে। এখন ডলারের টানা দর বাড়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে।
আয়ে শীর্ষ পাঁচ জেলা
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) দেশে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা জেলায়। এরপর রয়েছে যথাক্রমেÑ চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও নোয়াখালী জেলার অবস্থান। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঢাকা জেলায় রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৫৬ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। চট্টগ্রাম জেলার রেমিট্যান্স এসেছে ২৪৪ কোটি ২৩ লাখ ডলার। কুমিল্লা জেলায় রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৬ কোটি ৭২ লাখ ডলার। সিলেট জেলায় রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৬ কোটি ২১ লাখ ডলার এবং নোয়াখালী জেলায় রেমিট্যান্স এসেছে ৯০ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
কম আয় যেসব জেলায়
২০২৪-২৫ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) প্রবাসী আয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে লালমনিরহাট জেলা। এই জেলায় গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ২ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। প্রবাসী আয়ে একেবারে শেষদিকে থাকা অপর চারটি জেলা হলোÑ ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রাঙামাটি ও বান্দরবান। গত অর্থবছরে বান্দরবান জেলায় রেমিট্যান্স এসেছে ২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার, রাঙামাটি জেলায় ২ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, ঠাকুরগাঁও জেলায় ৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার ও পঞ্চগড় জেলায় ৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার।
সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কুমিল্লা জেলায়
দেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কুমিল্লা জেলায়। দীর্ঘকাল ধরে প্রবাসীর সংখ্যায় এগিয়ে থাকা কুমিল্লা জাতীয় অর্থনীতি ও স্থানীয় অর্থ সম্প্রসারণে অসামান্য অবদান রাখছে। কুমিল্লার অর্থনীতিতে প্রবাসীদের ভূমিকা রয়েছে। কুমিল্লার প্রবাসীদের একটি বড় অংশ আছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে সৌদি আরব, ওমান, কাতার, সংযুুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, কুয়েত, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়া। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে, অর্থবছরের ১১ মাসে কুমিল্লা জেলা থেকে বিদেশে গেছেন ৮৫ হাজার ১৮০ জন।
আপনার মতামত লিখুন :