লস রেভিনিউ বা ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব ১ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বিভাগ (এনবিআর)। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে গঠিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট মাত্র ৭ মাসে এই সফলতা অর্জন করেছে।
নানা প্রতিকূলতার মাঝেও নবগঠিত প্রতিষ্ঠানটি (ডিসেম্বর-জুন) ১৮৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আয়কর নথি যাচাই ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাদের মধ্যে ২৩১টি এ-চালানের মাধ্যমে ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা উদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে কর জমা হয়েছে। রাজস্ব আদায়ে অনাদায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেবে এনবিআর কর্তৃপক্ষ।
আয়কর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট তার পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরুর সাত মাস অতিক্রম করেছে। নবগঠিত সংস্থা হিসেবে এ ইউনিটের জনবল ও লজিস্টিকজনিত বহুবিধ সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রাজস্ব পুনরুদ্ধারসহ গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে কর ফাঁকি উদঘাটনে কাজ করছে। এতে আইনানুগ ও ন্যায্য রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করতে অনুকরণীয় ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠান।
লস রেভিনিউ অনুসন্ধান সম্পর্কে এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের করকমিশনার মো. আব্দুর রাকিব রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘লস রেভিনিউ ঠেকাতে এই প্রতিষ্ঠানের তৈরি হয়েছে। যারা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে, সেগুলো অনুসন্ধান করে আদায় করছে গোয়েন্দা ইউনিট বিভাগ। কোনো বিশেষ অঞ্চল নিয়ে আমরা কাজ করছি নাÑ পাচার এবং রেভিনিউ লস ঠেকানোই মূল্য লক্ষ্য’ বলেন তিনি।
অন্য কর্মকর্তারা জানান, নবগঠিত দপ্তরটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়। এ পর্যন্ত সাত মাসে গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে ১৮৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকির প্রাথমিক তদন্তে ১ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। উদ্ঘাটিত রাজস্ব ফাঁকি থেকে ৬৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২৩১টি এ-চালানের মাধ্যমে ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা উদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে কর জমা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে সুনির্দিষ্ট কর ফাঁকির তথ্য পাওয়ায় শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবসমূহ অন্তর্বর্তীকালীন জব্দ করা হয়েছে। আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট করদাতাদের স্বেচ্ছায় সঠিক কর প্রদানে উৎসাহিত করছে এবং একইভাবে কর ফাঁকিবাজ ও অর্থ পাচারকারীদের প্রতি স্পষ্ট বার্তা প্রদান করছে। যেকোনো ধরনের করফাঁকি ও বেনামি সম্পদ অর্জনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট বদ্ধপরিকর।
বাংলাদেশের রাজস্ব খাতে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের যাত্রা নৈতিক, প্রযুক্তিগত ও আইনগত দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ইতোমধ্যে অর্জিত সফলতা প্রমাণ করেÑ এই ইউনিটের কার্যক্রম কেবলমাত্র রাজস্ব পুনরুদ্ধার নয়, করদাতাদের কমপ্লায়েন্স বৃদ্ধি ও কর সংস্কৃতি বিকাশেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে এনবিআরের একটি সূত্র।
এনবিআর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, কর আদায়ে ন্যায্যতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে জাতির সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা সম্ভব। আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা, প্রযুক্তিনির্ভরতা এবং দক্ষ মানবসম্পদ ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শক্তিশালী রাজস্ব কাঠামো বিনির্মাণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বলে এনবিআর বিশ্বাস করে।