বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে গভর্নরের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল মঙ্গলবার সচেতন ও দেশপ্রেমী কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষে স্মারকলিপি জমা দেন অতিরিক্ত পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাহীনুল ইসলামের একাধিক আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশিত হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকসহ জাতীয় আর্থিক খাতের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হয়েছে। এ ছাড়া বিতর্কিত পরিবহন ব্যবসায়ী খন্দকার এনায়েত উল্লাহর ফ্রিজ করা ব্যাংক হিসাব থেকে অবৈধভাবে ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরে এসেছে।
কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, গভর্নরের নেতৃত্বে গঠিত সার্চ কমিটির সুপারিশে নাম না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক ও দলীয় প্রভাবের কারণে শাহীনুল ইসলামকে বিএফআইইউর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, যা দুঃখজনক। তারা এই পরিস্থিতিতে দুটি দাবি উত্থাপন করেছেনÑ শাহীনুল ইসলামকে অবিলম্বে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া এবং দ্রুত তদন্ত পরিচালনা করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া; ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পূর্বে রাজনৈতিক ও দলীয় বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়োগপ্রাপ্তদের বিষয়ে এর আগে গৃহীত সিদ্ধান্ত জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, জাতীয় আর্থিক খাতের সুশাসন ও জনগণের আস্থা রক্ষার্থে উপরোক্ত দাবিগুলো দ্রুত বিবেচনা করা জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সচেতন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে এই স্মারকলিপি জমা দেন অতিরিক্ত পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অন্য কর্মকর্তারা। জানা গেছে, বিএফআইইউর প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলামের একাধিক আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওগুলোর সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। মঙ্গলবার (আজ) গভর্নরের কাছে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।
ভিডিও ফাঁসের ঘটনাটি এমন এক সময় সামনে এলো, যখন সম্প্রতি এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর ফ্রিজ করা ব্যাংক হিসাব থেকে ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দিয়ে ব্যাপক সমালোচনায় পড়েছেন শাহীনুল ইসলাম। গত বছরের নভেম্বরে এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৫০টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১২০ কোটি টাকা ফ্রিজ করে বিএফআইইউ। তবে চলতি বছরের এপ্রিলে ব্যাংক আল-ফালাহর চারটি হিসাব পুনরায় ফ্রিজ না করে ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ তথ্য জানতে পারে। দুদকের তদন্তে আরও উঠে এসেছে, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাস থেকে দৈনিক প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা তুলতেন। দুদকের আবেদনে গত ২৭ মে আদালত ওই ১২০ কোটি টাকা ফ্রিজ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু এখন জানা গেছে, এসব হিসাবে রয়েছে প্রায় ১০১ কোটি টাকা, আর বাকি অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার পেছনে অনৈতিক সুবিধার অভিযোগ উঠেছে।
শাহীনুল ইসলাম এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘এনা পরিবহনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসা পরিচালনার স্বার্থে কিছু টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়। অনুরূপভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানকেও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। দুদক থেকে জানতে চাইলে আমি ব্যাখ্যা দেব।’ আপত্তিকর ভিডিও নিয়ে তিনি দাবি করে বলেন, ‘আমাকে হেয় করার জন্য কে বা কারা এগুলো ছড়িয়েছে। এগুলো ভুয়া।’