চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। জুলাইÑসেপ্টেম্বর সময়ে বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সামান্য বেশি। একক মাস হিসেবে গত সেপ্টেম্বরে আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়লেও মূলত চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে কমে যাওয়ায় সার্বিক চিত্র এখনো কমই রয়েছে। এই অর্থবছরের জুলাইয়ে বরাদ্দের শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ ব্যয় হয়েছে; যা আগের অর্থবছরের একই মাসে ছিল ১ দশমিক ০৫ শতাংশ। গতকাল রোববার এডিপি বাস্তবায়নের সবশেষ তথ্য প্রকাশ করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ আইএমইডি। অর্থ ছাড়ে বিলম্ব, প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা আর প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে এই প্রবণতা দেখা দিয়েছে। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, এই ধারা অব্যাহত থাকলে বছরের শেষ দিকে আবারও হঠাৎ ব্যয় বাড়ানোর চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এতে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হতে পারে ব্যাহত।
এবার ‘কাটছাঁটের’ বাজেট দেওয়ার পরও এত কম বাস্তবায়নকে ‘ভালো লক্ষণ’ হিসেবে দেখছেন না বলে অগাস্টে মন্তব্য করেছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে এসে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি দেখলাম, প্রকল্পের বাস্তবায়ন এই এক মাসের, মানে জুলাইয়ের বাস্তবায়ন হাতে এসেছে। দেখলাম, এটা তো ১ শতাংশেরও কম। এটা গত বছরের থেকেও কম। এটা ভালো লক্ষণ না। গত বছর তো অনেক কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ছিল। এ বছর তো আরও গতিশীল হওয়ার কথা। আগের বছরের অজুহাত এ বছর দেওয়া চলবে না। আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ নির্বাচনের ঘোষণা হওয়ায় ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতেই সংশোধিত এডিপি ঘোষণার পরিকল্পনার কথাও তিনি তোলেন।
আইএমইডির প্রতিবেদনের তথ্যমতে, জুলাই-সেপ্টেম্বরে মোট ১২ হাজার ১৫৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৩ হাজার ২১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সাধারণত অর্থবছরের প্রথম দিকে উন্নয়ন কর্মকা-ে অর্থছাড় কম হয়, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে। গত জুলাইয়ে আন্দোলনের জন্য বাস্তবায়নের গতি অন্যান্যবারের তুলনায় কম ছিল। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, কারফিউ জারি, কমপ্লিট শাটডাউনের মতো ঘটনায় কর্মকা- বাধাগ্রস্ত হয়। পরে আগস্টে সরকারের পতন হলে আওয়ামী লীগ ঘরানার ঠিকাদারেরা অনেকে পালিয়ে গেলে এবং নতুন সরকার এসে প্রকল্পগুলো খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিলে অর্থবছরের পুরো সময়টা উন্নয়ন কর্মকা-ে স্থবিরতা দেখা যায়। অর্থ কাটছাঁট ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে দাবি করে অনেক প্রকল্প বন্ধও রাখে সরকার। তার প্রভাব পড়ে এডিপিতে; দুই দশকের মধ্যে তলানিতে নামে বাস্তবায়নের হার।
২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে সংশোধিত এডিপির মোট বরাদ্দের ৬৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়। এই হার আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ পয়েন্ট কম। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির অর্থ ব্যয়ের হার ছিল ৮০ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
১ টাকাও খরচ করেনি ৩ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ
চলতি অর্থবছরের তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মাসে ১ টাকাও খরচ করতে পারেনি সরকারের ৩ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংসদবিষয়ক সচিবালয়।
বেশি বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কম খরচের হার
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়ার পরও বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ৫ শতাংশ খরচ করতে পারেনি। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৩৫ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সরকার বিভাগ ব্যয় করেছে ২ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। এ ছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ব্যয় করেছে মোট বরাদ্দের ২ দশমিক ১৩ শতাংশ, সেতু বিভাগ ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৩ দশমিক ১০, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১ দশমিক ৯০ শতাংশ, শিল্প মন্ত্রণালয় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রলায় ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২ দশমিক ১৩ শতাংশ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ, জননিরাপত্তা বিভাগ শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ ব্যয় করেছে।