রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৫, ০২:৪৯ এএম

দুর্নীতির আখড়া মাউশিতে চলছে দুর্নীতিবাজের খোঁজ

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৫, ০২:৪৯ এএম

দুর্নীতির আখড়া মাউশিতে চলছে দুর্নীতিবাজের খোঁজ

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ও শিক্ষকদের মানোন্নয়ন, তদারকির জন্য গড়া হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর-মাউশি। অথচ বিগত দেড় দশকে এই খাতের মান্নোয়নের বিপরীতে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন দপ্তরটির একদল কর্মকর্তা। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দলটির অনুসারী কর্মকর্তারা তদবির, নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্যে বেশি সময় পার করেছেন। সর্বশেষ মাউশির ৪ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগেই ৫০০ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে মাউশিতে বিক্ষোভ ও মিছিলও করেছেন অনেকে। সরকার পতনের পর মাউশির দুর্নীতিবাজখ্যাত সেই বিতর্কিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খোঁজে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। তাদের আমলনামা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এতে চাকরি হারানোর পাশাপাশি পদোন্নতি আটকে যেতে পারে অন্তত শতাধিক কর্মকর্তার। 
সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে শৃঙ্খলা ও অভিযোগ নিষ্পত্তি ও অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনায় একজন কর্মকর্তাকে মনোনীত করা হয়। মাউশির সব অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক কাজী মো. আবু কাইয়ুম শিশিরকে অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকেই তিনি এসব অভিযোগ তদন্তে নেমেছেন। 
সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর মাউশির অধীনে ২৮টি পদে ৪ হাজার ৩২ জনের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদে ৩ হাজার ৪২২ জনের চূড়ান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এই নিয়োগে প্রশ্নফাঁসসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত  প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের মাউশির তৎকালীন শিক্ষা অফিসার চন্দ্র শেখর হালদারসহ প্রশ্নফাঁস চক্রের আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। ওই চক্রটি প্রশ্ন ফাঁস করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে ওই পরীক্ষাটি বাতিলও করা হয়। 
এই নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক সূত্র ওই সময় জানায়, মাউশির এই বিশাল নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ বিধি অনুযায়ী প্রথমে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ওই অবস্থান থেকে সরে এসে কেবল ৭০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা নেয় মাউশি।
এ ছাড়া এই নিয়োগে ‘প্রদর্শক’ ক্যাটাগরির দশম গ্রেডের পদগুলোকে তৃতীয় শ্রেণি দেখিয়ে মাউশি নিজেরা নিয়োগ দিচ্ছে। এটা সম্পূর্ণরূপে সরকারি চাকরি বিধিমালার পরিপন্থি। ওই নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন মাউশির কলেজ ও প্রশাসন শাখার তৎকালীন পরিচালক অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী এবং সদস্য সচিব ছিলেন তৎকালীন উপপরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) মো. রুহুল মোমিন। পরিবর্তিতে নানা অনিয়মের অভিযোগে রুহুল মোমিনকে বদলি করা হয়। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস। তিনিও আগের ধারাবাহিকতায় নিয়োগে নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। 
এদিকে ৫শ কোটি টাকার এই ঘুষ লেনদেন এবং দুর্নীতির অর্থ ভাগ-বাটোয়ারার অভিযোগ যাচাই করতে গত পহেলা জুলাই শাহেদুল খবির চৌধুরী, বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসকে ডেকেছিল মাউশির মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন উইং। তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে জবানবন্দি। বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নিয়োগ, বদলি ও এমপিওভুক্তিতে ঘুষ নেওয়া ছাড়াও নিজের লেখা নোট-গাইড বই বিক্রির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তার অফিস থেকে বিক্রি করতেন এসব বই। এ প্রসঙ্গে জানতে শাহেদুল খবির চৌধুরী ও বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। 
অন্যদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন মাউশিতে আওয়ামী লীগের পক্ষে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন দপ্তরটির বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মচারী। সরকার পতনের পর সেইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ২১ কর্মকর্তাকে মাউশিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও অন্তত ২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা। 
জানা যায়, গত বছরের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘এ যুগের রাজাকার’ বলে মন্তব্য করেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এর পরপরই বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ৩ আগস্ট চট্টগ্রামে নওফেলের বাসভবনে হামলা চালায়। এই হামলার প্রতিবাদে ৪ আগস্ট শিক্ষা ভবনে বিক্ষোভ করেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কয়েকজন কর্মকর্তা। এ সময় তারা আওয়ামী লীগের এবং নওফেলের পক্ষে নানা স্লোগান দেন তারা। ওই সমাবেশে বিএনপিকেও বিষোদগার করা হয়। 
মাউশির তৎকালীন ডিজি অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ও পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক ড. এ কিউ এম শফিউল আজমের নির্দেশেই এই মিছিলটি হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন ডিআইএ’র কর্মকর্তা আব্দুল মুকিম, মাউশির মাধ্যমিক শাখার সাবেক পরিচালক সৈয়দ আবু জাফর, উপ-পরিচারক বিপুল বিশ্বাস, মাহাবুবা ইয়াসমিন, সাবেক শিক্ষা অফিসার কাওছার আহমদ, তরিকুল ইসলাম, প্লানিং শাখার সাবেক কর্মকর্তা সুমন বিশ্বাস, গবেষণা কর্মকর্তা কায়েছসহ অনেকেই। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অনেকের চাকরি হারানো পাশাপাশি পদোন্নতি আটকে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 
সার্বিক বিষয়ে মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক কাজী মো. আবু কাইয়ুম শিশির রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, চার হাজার কর্মকর্তা নিয়োগের ৫০০ কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন অভিযোগে ওই নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক শাহেদুল খবির চৌধুরী ও বিপুল চন্দ্র বিশ^াসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তারা সন্তুষ্টমূলক জবাববন্দি দিতে পারেনি। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের পক্ষে মিছিলের অভিযোগে যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তারা ইন্টারেস্টিং তথ্য দিয়েছেন। এই ঘটনায় কারা নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং অর্থের যোগান দিয়েছেন সেই তথ্য জানিয়েছেন। বাকিদের বিরুদ্ধেও আমরা তদন্ত করে দেখব।  
দুদকের জালে আরও ৫ কর্মকর্তা: মাউশির আইন শাখার কর্মকর্তা আল আমিন সরকার। তিনি আইন শাখায় কর্মরত আছেন ২০০৮ সাল থেকে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির মামলা এবং এমপিও সংক্রান্ত সমস্যা নিষ্পত্তি করে দেওয়ার নামে তার অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি ছিল সবার মুখে মুখে। টাকা ছাড়া তার কোনো ফাইল নড়ে না। তদন্ত কর্মকর্তা নন, তারপরও অনেক তদন্তে গিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নাম ভাঙিয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন তিনি। 
আল আমিন সরকার ছাড়াও মাউশির প্রশিক্ষণ বিভাগে সাবেক পরিচালক প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য, সেসিপের পরিচালক শামসুন নাহার, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের এমদাদুল কবীর চৌধুরী  ও আইসিটি ২য় পর্যায় প্রকল্পের সাবেক পরিচালক নওশের আলীকে সম্প্রতি দীপু মনি ও নওফেলসহ সাবেক শিক্ষামন্ত্রীসহ সশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎপূর্বক নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। 
দুদক সূত্র জানায়, এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ প্রসঙ্গে আল আমিন সরকার বলেন, দুদক আমাকে ডেকেছিল। আমি জবাব দিয়ে এসেছি। বাকি কর্মকর্তাদের ফোনে পাওয়া যায়নি। 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!