ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

৩ প্যানেলের দাবিতে  পেছাল রাকসু নির্বাচন 

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ১১:৩৩ পিএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। আগামী ১৬ অক্টোবর নির্বাচনের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ছাত্রদল, বামপন্থি  ও স্বতন্ত্র প্যানেলের দাবির মুখে দিনভর উত্তেজনা শেষে ২০ দিন পেছাল নির্বাচন। 

গতকাল সোমবার রাত পৌনে ৮টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে ভিন্ন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি আলোচনায় বসেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। এ সময় কমিশনের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, বামপন্থি  ও স্বতন্ত্র প্যানেলের নেতারা। ছাত্রশিবিরের নেতারা অবস্থান নেন ২৫ তারিখের নির্বাচনের পক্ষে এবং অন্যরা নির্বাচন পেছানোর দাবি জানান। পরে নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্ত জানানো হলে কমিশন কার্যালয় ছাড়েন ছাত্রদল, বামপন্থি ও স্বতন্ত্র প্যানেলের নেতারা। তবে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ছাত্রশিবির কমিশন কার্যালয়ের ফটক অবরোধ করে স্লোগান দিচ্ছিল।

এ দিকে কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনপূর্ব উদ্ভূত পরিস্থিতি সার্বিকভাবে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়। এ সভা লক্ষ্য করে যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজমান পরিস্থিতি কোনো অবস্থাতেই রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূলে নয়।’ 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিবেচনায় রাকসু নির্বাচন উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার স্বার্থে কমিশন আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর তারিখের পরিবর্তে আগামী ১৬ অক্টোম্বর বৃহস্পতিবার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে।’

এর আগে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতের পরেই রাকসু নির্বাচন চান ৩টি প্যানেলসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। গতকাল দুপুরে ক্যাম্পাসের পরিবহন মার্কেটের আমতলায় সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এ দাবি জানান। প্যানেল ৩টি হলো- ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’, ‘রাকসু ফর র‌্যাডিক্যাল চেঞ্জ’ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-সমর্থিত প্যানেলে ‘সচেতন শিক্ষার্থী পরিষদ’। এর কিছু সময় পরেই এক ব্রিফিংয়ে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন দুর্গাপূজার ছুটির পরে নির্বাচনের দাবি জানান। তার যুক্তি, ছুটির কারণে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছাড়ছেন এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। 

তবে ছাত্রশিবির নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে অনড় রয়েছে। নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের পরে কমিশনের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও তাদের মনোনীত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘এই প্রশাসন এমন একটি ফাঁদে বারবার পা দিয়েছে, যারা নির্বাচন চায় না। বারবার নির্বাচন পেছানোতে আমাদের মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে তারা আসলেই নির্বাচন করতে পারবে কি না। আমরাও জানি অনেক শিক্ষার্থী চলে গেছেন। তারা গেছেন এই প্রশাসন নিশ্চিত করতে পারেনি ২৫ তারিখে নির্বাচন হবে কি না’।

শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মানববন্ধন : এদিকে পোষ্য কোটায় ভর্তি স্থগিত ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের বিচারে দাবিতে গতকাল বেলা ১১টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকরা। কর্মসূচিতে সংহতি জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।

এ সময় কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক বেলাল হোসেন বলেন, ‘গত ২০ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীদের দ্বারা শিক্ষকরা যে হেনস্তার শিকার হয়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ন্যক্কারজনক ঘটনার কোনো সুরাহা করতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের  দাবি হলো তিন দিনের মধ্যে এই ঘটনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ইউট্যাব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিচারকার্য না করেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চায়। এই সন্ত্রাসীদের বিচারকার্য না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষক ক্লাসরুমে ফিরে যাবে না’। 

শাটডাউনে অচল ক্যাম্পাস : শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই গত ১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ভর্তি উপ-কমিটির সিদ্ধান্তে ১০ শর্তে পুনর্বহাল করা হয় পোষ্য কোটা। শুরু হয় পোষ্য কোটাবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ। রাত পৌনে ৭টার দিকে তারা অবস্থান নেয় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে। পরে তাদের সঙ্গে সংহতি  জানায় ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, বামপন্থিসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে সেদিন উপাচার্য নিজ বাসভবনে না থাকায় রাত ১২টার দিকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেন তারা।

পরের দিন জুমার নামাজ শেষে বের করা হয় বিক্ষোভ মিছিল। এদিকে সেদিন বিকেল ৫টার দিকে অনশনে বসেন এক শিক্ষার্থী। তার সঙ্গে সংহতি জানায় আরও কয়েকজন। সারারাত চলে অনশন। বিকেল ৩টা পর্যন্ত কয়েক দফা কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ কথা বললেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি তারা। পরে এ ঘটনা নিয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পোষ্য কোটা পুনর্বহাল ও হাতাহাতির ঘটনা জড়িতদের বিচার চেয়ে ক্যাম্পাসে কমপ্লিট শাটডাউন ও মানববন্ধনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এ বিষয়ে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে রাকসু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয় তাই নির্বাচন কমিশন দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন,  ‘তারা (ছাত্রশিবির) মানছে না কিন্তু মানতে হবে। ক্যাম্পাসের এই অবস্থায় এখন কোনোভাবেই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।’