জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কিছু রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবেÑ এটি জাতীয় ঐক্য নয়। কিছু দলের বৈঠক মানে জাতীয় ঐক্য নয়।’ গতকাল শুক্রবার এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
গতকাল বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। কিছু বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে স্বাক্ষর না করার কথা বলে বাম গণতান্ত্রিক শক্তি। আবার জুলাই আন্দোলনের পর যেই সনদ তৈরি করা হয়েছে, তার বাস্তবায়ন নিয়ে ‘ধোঁয়াশা’ থাকার কথা বলে তাতে স্বাক্ষর না করার ঘোষণা দিয়েছে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা তরুণদের দল এনসিপি।
অনুষ্ঠানে নাহিদ বলেন, ‘কিছু মানুষ মনে করে, কয়েকটি দল একত্রিত হলেই বোধ হয় জাতীয় ঐক্য হয়ে যায়। আজকেও জুলাই সনদ নামে একটা সনদে কিছু রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে স্বাক্ষর করবে এবং এর নাম তারা দিতে চায় জাতীয় ঐক্য। আমরা মনে করি, এটা কোনো জাতীয় ঐক্য নয়। যেখানে ছাত্র-শ্রমিক ও নানান পেশাজীবী মানুষ একত্রে অবস্থান করবে, সেটাই হবে জাতীয় ঐক্য।’ তিনি বলেন, ‘আজকে একটি ঐতিহাসিক দিন, যে দিন কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐক্যমতের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে স্বাক্ষর করছে। আর জাতীয় শ্রমিকশক্তি রাজপথে নিজেদের অবস্থানের জানান দিচ্ছে। একদিন এই শ্রমিকশক্তি জয়ী হবে।’
শেখ হাসিনার শাসনামালে শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারী শাসনে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন শ্রমিকেরা। ২০২৪ সালের দিকেও শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির জন্য আন্দোলন করতে হয়েছিল। পুলিশের গুলিতে অনেকে নিহত হয়েছিলেন। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থায় শ্রমিক, নাগরিক কারও মৌলিক অধিকার ছিল না। গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐক্য হয়েছিল বিধায় স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। যখন নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের একটি স্বার্থের ভিত্তিতে, দেশপ্রেমের ভিত্তিতে একত্রিত হয়ে লড়াই করে, তখনই জাতীয় ঐক্য হয়। এটা আমরা দেখেছিলাম জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়। আমরা সেই জাতীয় ঐক্যের দিকেই এগোচ্ছি, যেখানে ছাত্র-শ্রমিক কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করবে।’
অন্তর্বর্তী সরকার জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংস্কার না করে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারে বেশি মনোযোগী রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর এই সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করেছে। সেখানে শ্রম কমিশনও একটা হয়েছে। কিন্তু এই শ্রম কমিশন নিয়ে আপনারা কোনো আলোচনা দেখেছেন? এটা নিয়ে কোনো আলোচনা নাই। স্বাস্থ্য কমিশন নিয়ে কোনো আলোচনা নাই। মানুষের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা নাই। শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক ছয়টি সংস্কার কমিশন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেখানেও গণতন্ত্রের জন্য সবার ভালো ইনটেনশন দেখতে পারি নাই। যে গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক রূপান্তরের যে লড়াই শুরু হয়েছে, সেই লড়াই আমরা চালিয়ে যাব।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আজও শ্রমিকদের মুক্তি আসেনি। এখনো শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরির জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। গার্মেন্টসে আগুন লাগছে। বস্তিতে আগুন লাগছে। কলকারখানায় আগুন লাগছে। শ্রমিক মারা গেলে ২ লাখ, ৩ লাখ টাকায় জীবনের দাম নির্ধারণ করা হয়। শ্রমিকের জীবনের কোনো মূল্য হয় না। শ্রমিকের শ্রমকে কেবল অর্থনীতি শোষণের কেন্দ্র ভাবলে চলবে না।’
অনুষ্ঠানে নতুন সংগঠনের নেতাদের নাম ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম। জাতীয় শ্রমিকশক্তির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাজহারুল ইসলাম ফকির। সদস্যসচিব শ্রমিক নেতা রিয়াজ মোর্শেদ। মুখ্য সংগঠক শ্রমিক নেতা আরমান হোসেন।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, নাহিদা সারওয়ার নিভা, আল আমিনসহ অন্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।