বাড়িভাড়া ৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে মাউশি অভিমুখে খালি প্লেট নিয়ে ‘ভুখামিছিল’ করেছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। গতকাল রোববার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে ভুখামিছিল নিয়ে মাউশির দিকে গেলে হাইকোর্ট মোড়ে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। পরে সেখানে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করে শহিদ মিনারে ফিরে আসেন। এদিকে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে সরকার ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে শিক্ষকদের ক্লাসরুমে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সিআর আবরার। তবে শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসরুমে ফিরে যাবেন না। আজ সোমবার সকাল ১০টায় শহিদ মিনারে অনশন ও শিক্ষক সমাবেশ করবেন বলে জানিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন আজিজী।
গতকাল রোববার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা হারে বাড়িভাড়া নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশে বলা হয়, সরকারের বিদ্যমান বাজেটের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২ হাজার) প্রদান করা হলো। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে গত ৫ অক্টোবর এই ঘোষণা প্রকাশ্যে এলে শিক্ষকেরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন। এরপর গত ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এদিকে গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্বনির্ধারিত ‘ভুখামিছিল’ কর্মসূচি আটকে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মিছিলটি শহিদ মিনার থেকে শিক্ষা ভবনের দিকে যাওয়ার পথে হাইকোর্টের মাজার গেটে বাধার মুখে পড়ে। সেখানে পুলিশ-বিজিবি ও শিক্ষক-কর্মচারীরা মুখোমুখি অবস্থান নেন। এরপর বিকেল পৌনে ৫টায় শিক্ষক-কর্মচারীরা শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে ফিরে যান। তবে শিক্ষক-কর্মচারীদের মিছিলটি দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্ট মোড়ে এলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। হাইকোর্ট মোড়ে পুলিশের শতাধিক সদস্য এবং ছয় প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করতে দেখা গেছে। শিক্ষক-কর্মচারীরা সেখানে এক ঘণ্টা অবস্থান করে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আবার শহিদ মিনারে ফিরে যান। এ সময় শিক্ষক-কর্মচারীরা ‘হয়তো দাবি মেনে নে, নয়তো বুকে বুলেট দে’, ‘৫% এর প্রজ্ঞাপন, মানি না, মানব না’, ‘প্রহসনের প্রজ্ঞাপন, মানি না, মানব না’, ‘সি আর আবরার, আর নয় দরকার’ প্রভৃতি সেøাগান দিতে থাকেন।
শিক্ষকদের ভুখামিছিল গতকাল দুপুর ১২টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল। দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, তারা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তাই ভুখামিছিল শুরু হতে দেরি হলো। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে এ শিক্ষক নেতা বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবি তুলে ধরেছি। আমরা মনে করি, বিএনপি এ দাবির প্রতি একমত পোষণ করে। শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি আদায়ে তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।’
এ ছাড়া গতকাল বিকেলে শহিদ মিনারে আন্দোলনরত শিক্ষকদের আন্দোলনে সংহতি জানান, ডাকসু ভিপি সাদেক কায়েম। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়াও সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থানে দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, শিক্ষক সমাজের অনেক বেশি পাওয়া দরকার। কিন্তু বর্তমান সীমাবদ্ধতার কারণে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ করেছে। এর জন্য আমাদের দিক থেকে যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। এ অবস্থায় সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাই।’
মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা এবং উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ নির্ধারণের দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের ব্যানারে গত ১২ অক্টোবর থেকে আন্দোলন করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। সে দিন সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু হলেও দুপুরে পুলিশের অনুরোধে তারা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে চলে যান। ওই দিন দুপুরে শিক্ষকদের একটি অংশের ওপর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে, জলকামানের পানি ছিটিয়ে এবং লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দেয়। শিক্ষকদের ওপর ‘পুলিশের হামলার’ প্রতিবাদে সোমবার থেকে সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় প্রেসক্লাব ও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান, সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ ও শাহবাগ মোড় অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করছেন।