অবশেষে জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছে কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন দল গণফোরাম, যারা দুই দিন আগে সংসদ ভবনের অনুষ্ঠানে গেলেও মতভিন্নতার কারণে সনদে সই করতে অস্বীকার করেছিল। গত শনিবার দুপুরে জাতীয় সংসদের এলডি হলে গণফোরামের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সনদে স্বাক্ষর করেন।
রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগে যেসব রাজনৈতিক দল ও জোট জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ সংলাপ পর্বে অংশ নিয়েছিল, তার মধ্যে ২৪টি দল গত শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে এই সনদে সই করে।
চব্বিশের অভ্যুত্থান বাংলাদেশে পরিবর্তনের যে আকাক্সক্ষা এবং সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, তা কাজে লাগাতেই গত বছরের শেষে এই সনদ করার দাবি তুলেছিলেন জুলাই আন্দোলনের প্রথম সারির নেতারা। তাদের গঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঐকমত্যের সংলাপে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি ‘স্পষ্ট’ না হওয়ায় অনুষ্ঠান বর্জন করে দলটি।
এ ছাড়া ইতিহাস ‘সঠিকভাবে না আসা’ এবং সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন নিয়ে আপত্তির কারণে বাম ধারার চারটি দল সনদে সই করেনি। দলগুলো হল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ।
গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সেদিন অনুষ্ঠানে গেলেও সনদে সই করেননি। তখন দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, সংবিধানের ১৫০-এর ২ অনুচ্ছেদ (স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র) সংশোধন করে সংবিধানের পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তপশিলে বাদ রাখার বিষয়টি স্পষ্ট করার চূড়ান্ত কপি না পাওয়ায় তারা স্বাক্ষর করেননি।
চূড়ান্ত কপি পাওয়ায় গতকাল রোববার সনদে সই করার কথা জানিয়ে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম সংবিধানের ১৫০-এর ২ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে এবং প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্টস যাতে রাখে। এটা না থাকলে আমাদের বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। আমরা আজকে আনন্দিত যে ঐকমত্য কমিশন বলেছে, তারা ১৫০-এর ২ অনুচ্ছেদ পুরোপুরি বাতিল না করে ৭ তপশিল বহাল রাখবে। এ জন্য আমরা স্বাক্ষর করছি।’
সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘গণফোরাম ঐকমত্য কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতার চেষ্টা করেছে। আমাদের নেতা, গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বলেছিলেন, সময়ের প্রয়োজনে জন-আকাক্সক্ষায় সংবিধান সংশোধন করা যাবে।’ সংবিধানের ১৫০-এর ২ অনুচ্ছেদের ৭ তপশিল বহাল রাখায় কমিশনকে তিনি ধন্যবাদ জানান। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে যারা যারা এখনো স্বাক্ষর করা বাকি আছেন, তাদের স্বাক্ষর করার আহ্বান জানান।