ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

বললেন সিইসি

অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না ইসি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ১১:১০ পিএম

নির্বাচন কমিশন কারো কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। গতকাল বুধবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত (টিওটি) এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। এ সময় নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, দুইটা কেয়ারটেকার সরকারের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষমতার স্বাধীনতা পেয়েছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তৈরির আবহ হচ্ছে দেখছি। আপনাদের ভয় নেই, সব সহায়তা আপনাদের দেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিইসি বলেন, ‘আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। আমাদের দেশের দুরবস্থার একটি মূল কারণ হলো, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নই। যে জাতি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল যত বেশি, সেই জাতি তত সভ্য বলে আমরা মনে করি। সভ্য দুনিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই কালচারটা কালটিভেট করতে হবে। উই ওয়ান্ট রুল অব ল, নট রুল বাই ল। শাসন করার জন্য বানালাম, সেটা না। আমরা চাই, সর্বস্তরের সবাই আমরা আইন মেনে চলব, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকব।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘একটা সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে আমরা চেষ্টা করব। আপনাদের নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পড়বে। যে দায়িত্ব পড়ুক না কেন, সেটা আপনারা ন্যায়সম্মতভাবে, আইনসম্মতভাবে, নিউট্রালি ও প্রফেশনালি পালন করবেন। নির্বাচনের মধ্যে সমন্বয় একটা বড় জিনিস। আপনারা যেহেতু উপজেলা পর্যায়ে নিয়োজিত, সমন্বয়ের দায়িত্বটা মূলত আপনাদের ওপরই নির্ভর করে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়টা খুবই জরুরি।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়, প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারের সঙ্গে সমন্বয়, কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল, জেলা মনিটরিং সেল, ইলেকশন মনিটরিং সেলের সঙ্গে সমন্বয়Ñ এই সার্বিক সমন্বয়টা আপনাদের খুব সিরিয়াসলি পারসিউ করতে হবে’, বলেন সিইসি।

নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আপনারা কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না এবং সম্পূর্ণভাবে আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে। নির্বাচন কমিশনও কিন্তু কারো কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। সুতরাং আমরা আপনাদের অন্যায় কোনো আদেশ দেব না। অন্যায় কোনো হুকুম দেব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মোবাইল ম্যাজিস্ট্রেসি অনেক ঘটনায় দেখা যায় হয়তো, এভরিথিং ইজ ওভার, সবকিছু শেষ হওয়ার পরে পৌঁছায়। তখন দেখবেন যে আর কেউ নাই। সবাই মারামারি করে ভোটের কেন্দ্র দখল করে, বাক্স দখল করে বাড়ি চলে গেছে, আর আপনি গিয়ে হাজির হলেন, সেটা যাতে না হয়, তা আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে।’

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর কিছুদিন অস্থিতিশীল ছিল। অমুক তমুক এর কথায় অনেক কিছু হয়েছে। কর্মকর্তাদের এখন আর সে ভয় নাই। আপনাদের ভয় নেই। সব ব্যাকিং দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের মান ভূলুণ্ঠিত হয়েছে সন্দেহ নাই। এ সরকারের অধীনে সততা নিষ্ঠা দেখানোর সুযোগ এটি। ভয় পাওয়া যাবে না, হিম্মতের সঙ্গে কাজ করতে হবে অস্তিত্বের প্রশ্নে। মোবাইল কোর্ট স্বচ্ছ হতে হবে। মোবাইল কোর্ট নিয়মিত করতে হবে।’

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘চরম বাস্তবতা হচ্ছে এ দেশের নির্বাচন পরিচালনা করে রিটার্নিং অফিসার তথা ডিসি। এর পরও সহজ কথায় বলি, নির্বাচন কমিশনই নির্বাচন পরিচালনার একমাত্র সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পাঁচ কমিশনারের পক্ষে এটা করা সম্ভব না। সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’

নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘প্রবাসীদের ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিতদের এবং কয়েদিদের জন্য অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। তারা নিবন্ধন সম্পন্ন করলে ভোটারের ঠিকানায় ব্যালট পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তারপর তারা ভোট দিয়ে সেই ব্যালট আবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন। অনলাইন ভিত্তিক এ পোস্টাল ব্যালটে ভোটের জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। অ্যাপটি বর্তমানে ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ১৬ নভেম্বর এটা সবার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থার সঙ্গে ইসির সাক্ষাৎ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছে। একই দিন আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সংস্থাটির আট সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করে। এ সময় ইসি সচিব আখতার আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, বৈঠকে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তারা আগামী নির্বাচনে ১০ জন পর্যবেক্ষক পাঠানোর কথা জানায়।

বৈঠকে আইআরআইর বোর্ড সদস্য ক্রিস্টোফার জে. ফুসনার, ইন্দো-প্যাসিফিক সিকিউরিটি প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো ও পরিচালক লিসা কার্টিস, গণতান্ত্রিক নির্বাচন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার কারিগরি বিশেষজ্ঞ (আইআরআই) জেসিকা কিগান, রেসিডেন্ট প্রোগ্রাম ডিরেক্টর (আইআরআই) স্টিভ সিমা, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর (এনডিআই) জেমি স্পাইকারম্যান, রাজনৈতিক দল ও প্রচারাভিযান পরামর্শক (আইআরআই) জন ফ্লুহার্টি, পরামর্শক (আইআরআই) ড্যারিন বিয়েলেকি এবং প্রোগ্রাম পরামর্শক (আইআরআই) অমিতাভ ঘোষ উপস্থিত ছিলেন।

প্রাক-নির্বাচনি পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য আইআরআইর উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক মিশন রাজনৈতিক দল, সরকারি কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নির্বাচন সংস্কার বিষয়ে ইতোমধ্যে মতবিনিময় করেছে।

আজ সিইসির সঙ্গে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের বৈঠক

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসবে বিএনপির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। বেলা ১১টায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে নির্বাচন কমিশন ভবনে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি সিইসির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবে। জানা গেছে, বৈঠকে নির্বাচনি আসন পুনর্বিন্যাসসহ আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।

এর আগে, গত মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ধারাবাহিক রাজনৈতিক সংলাপের অংশ হিসেবে বিএনপির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।