প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন, তাতে জুলাই জাতীয় সনদ লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘স্বাক্ষরিত জুলাই জাতীয় সনদ লঙ্ঘন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণের মাধ্যমে।’
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তিনি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন, আবার ভাষণের মাধ্যমে তিনিই তা লঙ্ঘন করেছেন।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ভাষণে জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা জাতিকে জানান। তিনি জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ মীমাংসিত। এটি নতুন করে আরোপ করার কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ নামে যে বডি, সেটি জাতীয় সংসদের কোনো পর্যায়ে গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার বিষয় ছিল না। এটা সম্পূর্ণ নতুন ধারণা।”
সালাহউদ্দিন আহমেদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ সংলাপে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেন।
এদিন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে গণভোট। চারটি প্রস্তাবের ওপর একটি প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোট দিতে হবে ভোটারদের।”
জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের ব্যালটে উপস্থাপন করা প্রশ্নও নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
প্রশ্নটি হবে: আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নি¤œলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন? ক) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে। খ) আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে। গ) সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে। ঘ) জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।”
গণভোটের দিন এই চার বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে মতামত জানাতে হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।

