রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী এরাদত আলীর দায়ের করা একটি মামলাকে কেন্দ্র করে থানার ওসির বিরুদ্ধে ৮৭ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় দুর্বৃত্তরা কাজী এরাদত আলীর রাজবাড়ী শহরের বাড়ি এবং সদর উপজেলার মাঠিপাড়া এলাকায় অবস্থিত গোল্ডেশিয়া জুট মিলসে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ ঘটায়। এতে কয়েক শ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে দাবি করেন তিনি।
কাজী এরাদত আলী রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি। তিনি রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর ছোট ভাই।
হামলা ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় কাজী এরাদত আলী এবং গোল্ডেশিয়া জুট মিলস লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. খায়রুল ইসলাম পৃথকভাবে লিখিত এজাহার দায়েরের আবেদন করেছিলেন। তবে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও থানার ওসি উভয়েই মামলা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।
এরপর কাজী এরাদত আলীর ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার দুর্জয় গোপনে থানার ওসি মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে চুক্তি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রথমে ওসি এক কোটি টাকা দাবি করলেও পরে ৮৭ লাখ টাকায় সমঝোতা হয়। এরপর নগদ ৮৭ লাখ টাকা ওসিকে প্রদান করা হয় এবং গোপনে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) গ্রহণ করা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, ভবিষ্যতে ব্যাংক ঋণ, বিমা দাবি বা দায় মওকুফের প্রয়োজনে এই জিডির প্রয়োজন হতে পারে, এমন ভাবনা থেকেই ঘুষের বিনিময়ে জিডি ও মামলা করা হয়েছিল।
যোগাযোগ করা হলে ম্যানেজার দুর্জয় বলেন, ‘ফিলিং স্টেশনে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার কিছুদিন পর দুটি জিডির কপি থানায় জমা দিয়েছিলাম। তবে পুলিশকে কোনো টাকা দিইনি, আর ওসির সঙ্গে কোনো চুক্তিও হয়নি।’ তিনি আরও জানান, কাজী এরাদত আলী বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন এবং তার অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানেন না।
ওসি মাহমুদুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘কাজী এরাদত আলীর মিলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তার এক স্বজন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। টাকা নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় যেখানে অনেক জায়গায় মামলা হয়নি, সেখানে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতার মামলাটি রাজবাড়ীতে গ্রহণ করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ওসি মাহমুদুর রহমান। মামলার বাদী ও বিবাদীদের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাদীর নাম আর মামলার তারিখ দেখতে হবে। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে বিবাদীদের নাম বলা যাবে না।’ মামলা সম্পর্কে আরও কিছু জানার থাকলে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

