ঢাকা শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫

বললেন গোলাম পরওয়ার

সরকারের সিদ্ধান্তে জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হয়নি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৫, ১১:৩৩ পিএম

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘জনগণের অভিপ্রায় ও গণদাবিকে উপেক্ষা করে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোটের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণায় জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণ হয়নি।’ গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের ওপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতের সেক্রেটারি গোলাম পরওয়ার বলেন, আট দলের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘‘সংবিধান সংস্কারসহ অন্যান্য সংস্কার বিষয়ে যে ৪৮টি প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতিকে জানাতে হবে। ভোটাররা সেই বিষয়ে জানার পরই গণভোটে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ মতামত দেবেন। কিন্তু একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হলে একজন ভোটারকে গণভোট দিতে হবে আবার প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনের ভোটও দিতে হবে। এটা একটা সংকট তৈরি করবে।’ গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের ইতিহাসে প্রতিটি নির্বাচনে কমবেশি কিছু ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা, বিশৃঙ্খলার কারণে ভোট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এবার কোনো কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার কারণে জাতীয় নির্বাচনের প্রতীকের ভোট বন্ধ হয়ে গেলে গণভোটের কী হবে, এর কোনো জবাব (সরকারের কাছে) নেই।’

গণভোটে জনগণকে কিসে ‘হ্যাঁ’ আর কিসে ‘না’ বলতে হবে, সেটি নির্বাচনের আগেই জানতে হবে উল্লেখ করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ভোটারদের গণভোটের বিষয়ে স্টাডি করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে গণভোটের বিষয়ে বিস্তারিত ওয়েবসাইটে দিতে হবে। তারপর এই জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই সুযোগ না দিয়ে দুটি ভোট একসঙ্গে দেওয়ার ঘোষণায় একটা সংকট তৈরি হলো।’

এই সংকট নিরসনের জন্যই জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি করছে বলে জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে গণভোট হলে সনদের আইনি ভিত্তি দৃঢ় হবে। পরে আইনি ভিত্তি নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না। সেই সংকট এখনো রয়ে গেছে।’ সরকারকে এই সংকট নিরসনের আহ্বান জানান তিনি।

জামায়াতসহ সমমনা আটটি দল নিজ নিজ দলীয় ফোরামে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ পর্যালোচনা করছে বলে জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘১৬ নভেম্বর দলগুলোর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। পরে আটটি দল সম্মিলিতভাবে তাদের করণীয় স্থির করবে।’

এদিকে পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতসহ আট দলের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি বহাল থাকবে বলে জানান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম, নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রমুখ।

এদিকে একইদিনে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির প্রতিবাদে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আর এক সংবাদ সম্মেলনে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন,  ‘যাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের আর জাতীয় রাজনীতিতে ফিরে আসার সুযোগ নেই। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের নানা হুমকি-ধমকি জনগণ রাস্তায় নেমে প্রতিহত করেছে। যাকে বাংলাদেশে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সে কীভাবে পার্শ্ববর্তী দেশের গণমাধ্যম ব্যবহার করে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে?’ তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আটদলীয় জোটের নেতাকর্মীরা নাশকতা প্রতিরোধে রাজপথে সক্রিয় রয়েছে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, সেটিকে বাধাগ্রস্ত করতে পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি নাশকতার চেষ্টা চালাচ্ছে।’