৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারমূল্য নিয়ে নতুন ইতিহাস গড়েছে কম্পিউটার চিপ ও গ্রাফিক্সকার্ড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া। চলতি মাসের শুরুর দিকে বিশ্বের প্রথম কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার ক্লাবে প্রবেশ করে এনভিডিয়া। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষে থাকা অ্যাপল ও মাইক্রোসফটকে পেছনে ফেলে নতুন নজির গড়ল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি।
গত আড়াই বছরে নাটকীয় উত্থান-পতনের মধ্যেও এনভিডিয়ার শেয়ারদর বেড়েছে এক হাজার শতাংশের বেশি। এআই জ্বরে কাঁপছে প্রযুক্তি বিশ্ব, আর সেই ঢেউয়ের সবচেয়ে বড় সার্ফার এখন এনভিডিয়া। কোম্পানিটি যেন আধুনিক এআই বিপ্লবের প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। ৪ ট্রিলিয়ন ডলার শুনতে যেমন বিশাল, বাস্তবে এর পরিসর আরও বিস্ময়কর। বর্তমানে এনভিডিয়ার বাজারমূল্য ৩ ট্রিলিয়ন ক্লাবে থাকা শুধু মাইক্রোসফট ও অ্যাপলকেই ছাড়িয়ে গেছে তাই নয়, বরং গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট এবং মেটা, এই দুই প্রযুক্তি জায়ান্টের সম্মিলিত বাজারমূল্যের চেয়েও এখন বড় এনভিডিয়া।
আরও বিস্ময়কর দিক হলো, এনভিডিয়ার বাজারমূল্য বিশ্বের সর্ববৃহৎ তিন খুচরা বিক্রেতা আমাজন, ওয়ালমার্ট ও কস্টকো’র সম্মিলিত মূল্য থেকেও বেশি। টেসলা, জেনারেল মোটরস, ফোর্ড এবং স্টেলান্টিস (ক্রাইসলার-এর মূল কোম্পানি) এই চারটি বড় অটোমোবাইল কোম্পানির মোট বাজারমূল্য মাত্র $১.২ ট্রিলিয়ন। অন্যদিকে নেটফ্লিক্স, ডিজনি ও কমকাস্ট; বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিনোদন প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত বাজারমূল্য $১ ট্রিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছায় না।
একই চিত্র দেখা যায় ভোক্তা ব্র্যান্ডের দিকেও। কোকা-কোলা, ম্যাকডোনাল্ডস, স্টারবাকস এবং চিপোটলে- এই চারটি বিশ্বখ্যাত খাদ্য ও পানীয় ব্র্যান্ড একত্রিত হয়েও এনভিডিয়ার বাজার মূল্যের ২০ শতাংশের কাছাকাছিও যেতে পারে না।
এই পরিসংখ্যানগুলো থেকে স্পষ্ট, ওয়াল স্ট্রিট কতটা আশাবাদী এনভিডিয়ার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে। যদিও অনেকে এই উত্থানকে এআই-ভিত্তিক এক প্রকার ‘ডটকম বাবল’ হিসেবে সন্দেহের চোখে দেখছেন, যা যেকোনো সময় ফেটে যেতে পারে। তবে এনভিডিয়ার সমর্থকরা বিশ্বাস করেন, প্রতিষ্ঠানটি বহু বছর ধরে ‘সোনালি এআই যুগ’ এর কেন্দ্রে থাকবে।
শেষ পর্যন্ত কে সঠিক প্রমাণিত হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে এখন পর্যন্ত, এনভিডিয়া বারবারই সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করেছে। ২০২৩ সালের মে মাসে যখন এর বাজারমূল্য ছিল মাত্র ৭৫০ বিলিয়ন, সেখান থেকে মাত্র এক বছরের একটু বেশি সময়ে তা বেড়ে চার ট্রিলিয়নে পৌঁছেছে; যা নিঃসন্দেহে একটি শ্বাসরুদ্ধকর উত্থান।