ঢাকা বুধবার, ২১ মে, ২০২৫

পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারে চট্টগ্রামে টালমাটাল বৈষম্যবিরোধীরা

জালালউদ্দিন সাগর, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৫, ০৪:১৮ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মব, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নারী হেনস্তা, অনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিধ্বস্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম কমিটি। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া, মুখপাত্র ফাতেমা আক্তার লিজার ব্যক্তিগত ভিডিও ভাইরাল ও পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারে স্থবির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। সংগঠনের এমন অবস্থায় বিব্রত কেন্দ্র। বিষয়গুলো অবসানের জন্য গত ১৯ মে চট্টগ্রামের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন কেন্দ্রীয় নেতারা। যদিও এখন পর্যন্ত নিজেদের ভুল স্বীকার করেননি কোনো পক্ষই। তুলে নেননি বহিষ্কার আদেশও।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম কমিটি ঘোষণার পর থেকেই চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও আর্থিক অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সমালোচিত হচ্ছিল জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটি। ইতিপূর্বে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠায় চট্টগ্রাম মহানগরের সংগঠক শাহরিয়ার সিকদার ও যুগ্ম সদস্যসচিব আবুল বাছির নাঈমকে বহিষ্কার করা হয়। গত ১৭ মে চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক আরিফ মঈনউদ্দীন ও সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিনের স্বাক্ষর করা দুটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই বহিষ্কারাদেশ জারি করা হয়।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, চাঁদাবাজির অভিযোগে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানায় আটক হওয়ায় চট্টগ্রাম মহানগরের সংগঠক শাহরিয়ার সিকদারকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। আর বন্দর থানা এলাকায় এক ব্যবসায়ীকে হেনস্তা করে চাঁদাবাজি করার অভিযোগে আবুল বাছির নাঈমকে চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সদস্যসচিব পদ থেকে বহিষ্কার করে সংগঠন।

শুধু চাঁদাবাজির অভিযোগই নয়, নিজ সংগঠনের মুখপাত্র লিজার একটি ব্যক্তিগত ভিডিও ও কিছু ছবি ভাইরাল করায় অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগেও তাকে বহিষ্কার করা হয়। আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের এমন কর্মকাণ্ডকে সাংগঠনিক বিধিবহির্ভূত এবং অসম্মানজনক দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও বার্তা দেন মুখপাত্র লিজা। ভিডিও বার্তায় তার বিরুদ্ধে ওঠা মাদকসেবনের বিষয়টি মিথ্যা ও বানোয়াট বলে চ্যালেঞ্জ জানান তিনি। পরদিন একই আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকে উকিল নোটিশও পাঠান লিজা। নোটিশে আহ্বায়ক আরিফ মঈনউদ্দিন ও সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিনকে সাত দিনের সময় দিয়ে লিজা বলেন, এর মধ্যে আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।

শুধু আইনি নোটিশ দিয়ে থামেননি বৈষম্যবিরোধী এই নেতা। একই দিন আহবায়ক আরিফ মঈনউদ্দিন ও সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারসহ অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে লিজা সমর্থিত একটি পক্ষ। গত ১৮ মে রোববার বিকেলে যুগ্ম সদস্যসচিব রাহাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে মহানগর কমিটির আহ্বায়ক আরিফ মঈনউদ্দিন ও সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিনকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।

যুগ্ম সদস্যসচিব হয়ে আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকে বহিষ্কারের বিষয়টি নেহাতই ছেলেমানুষি কর্মকাণ্ড বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগঠনের একাধিক নেতা। একই সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে কোনো আলোচনা না করে বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কারের বিষয়টি সাংগঠনিক অদক্ষতা বলেও মতপ্রকাশ করেছেন তারা।

আর জানা গেছে, কমিটি ঘোষণার পর থেকে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে বিভেদ সৃষ্টি হয় সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে। একই সঙ্গে নানা সমালেচনায় জড়িয়ে একে অন্যের শত্রুতে পরিণত হয়। একাধিক সূত্রের দাবি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আর্থিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে গত তিন-চার মাসে ছয় থেকে সাত খণ্ডে বিভক্ত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম কমিটি। 

এ বিষয়ে সংগঠনের মুখপাত্র ফাতেমা আক্তার লিজা মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, চাঁদাবাজিসহ বেশ কিছু অভিযোগ ওঠায় চট্টগ্রাম কমিটির কয়েকজনের সঙ্গে আমার মতপার্থক্য দেখা দেয়। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় আমাকে বহিষ্কার করা হয়।

মুখপাত্র লিজার এই বক্তব্যকে সমর্থন করে সংগঠনটির চট্টগ্রামের সাবেক আহ্বায়ক রিজাউর রহমান মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত ছাড়াই মুখপাত্র ফাতেমা আক্তার লিজাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। লিজার অপরাধ থাকলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারত। 

এসব অভিযোগের বিষয়ে সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন বলেন, সংগঠনের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে ফাতেমা আক্তার লিজাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও, অনৈতিক কাজ এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের বিষয়ে অনেক আগেই তাকে আমরা সতর্ক করেছিলাম।