বিডি পেইন্টস লিমিটেড ২০২২ সালে কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারের (কিউআইও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১২ কোটি টাকা তুলে নেয়। ১ কোটি ২০ লাখ শেয়ারের বিনিময়ে পুঁজিবাজারের এসএমই খাতে তালিকাভুক্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি। সেই টাকা ‘প্রসপেক্টাস’ অনুসারে ব্যবহার হয়েছে কি না এবং ব্যাবসায়িক বিভিন্ন কার্যক্রম অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
অনুসন্ধানকালে বিডি পেইন্টস লিমিটেডের কারখানা, প্রধান কার্যালয়, হিসাব বই, রেকর্ড ও অন্যান্য নথিপত্র খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অনুসন্ধান শেষে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বিডি পেইন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বেলাল খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘অনুসন্ধানের বিষয়ে কমিশন আগেই জানিয়েছে। কমিটির সদস্যরা আমাদের ব্যাবসায়িক সাফল্য নির্ণয়, উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা কৌশলসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেখবে। কমিশনকে সহায়তা করবেন আমাদের অফিসের সব কর্মকর্তা।’
বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেনÑ বিএসইসির উপপরিচালক মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল, সহকারী পরিচালক মো. মোসাব্বির আল আশিক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সিনিয়র এক্সিকিউটিভ গালিব নকিব রহমান।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বিডি পেইন্টসের কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ কোথায় ব্যবহার করা হয়েছে, তা খাতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া কোম্পানিটির লেনদেন, নগদ অর্থ, বিনিয়োগগুলোর ন্যায্য মূল্যায়ন ও সহযোগী কোম্পানির মধ্যে লেনদেন হয়েছে কি না, তা-ও শনাক্ত করা হবে। একই সঙ্গে প্রসপেক্টাস অনুসারে অর্থের ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তা যাচাই করা হবে। এ ছাড়া কমিশনের সম্মতিপত্র অনুসারে সময়ে সময়ে সে বিষয়ে রিপোর্ট করা হয়েছে কি না, তারও আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই করবে গঠিত তদন্ত কমিটি।
দেশের রং উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি বিডি পেইন্টস লিমিটেড। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এদিকে, সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১ দশমিক ৪৩ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির প্রতি শেয়ারে মুনাফা ছিল ১.২২ টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির প্রতি শেয়ারে নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৯৯ টাকা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে গতকাল শুক্রবার দেখা গেছে, কোম্পানির প্রতি শেয়ারে ক্লোজিং প্রাইস ছিল ৩৪ টাকা।
২০২২ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানটির পরিশোধিত মূলধন ৬২ কোটি এবং মোট শেয়ারের সংখ্যা ৬ কোটি ২০ লাখ। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৩০ দশমিক ৪৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪১ দশমিক ৬৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
২০২২ সালের ১২ এপ্রিল বিএসইসির ৮২০তম কমিশন সভায় বিডি পেইন্টসের কিউআইও অনুমোদন দেয় বিএসইসি। কোম্পানিটি কিউআইওর মাধ্যমে ১২ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যে ১ কোটি ২০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে। উত্তোলিত অর্থ দিয়ে ভবন নির্মাণ, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সংগ্রহ ও স্থাপন, চলতি মূলধন এবং ইস্যু ব্যবস্থাপনার খরচ খাতে ব্যয় করা হবে বলে প্রসপেক্টাসে জানায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।