ঢাকা শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫

নানা ইস্যুতে বিভক্ত ব্রিটিশ বাংলাদেশি ৪ এমপি

জুবায়ের আহমেদ, লন্ডন
প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ১২:৪৫ এএম

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একই দলের এমপি তারা। কিন্তু নানা ইস্যুতে ভিন্ন পথে হাঁটছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার ব্রিটিশ এমপি। রুশনারা আলী, রুপা আশা হক, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও আফসানা বেগমের মধ্যে যে মিল থাকার কথা ছিল, সেটা এখন আর নেই, দেখা দিয়েছে বিভক্তি। ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার দলের এই চার এমপি ব্রিটেনের স্থানীয় ও বাংলাদেশ ইস্যুতে রয়েছেন ভিন্ন মেরুতে।

জানা যায়, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া অভ্যুত্থানেও তারা ছিলেন একে অপরের বিরুদ্ধে। পতিত সরকারপ্রধান ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও বাকি তিন এমপি পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেন। জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের পক্ষে প্রকাশ্যে নিজের অবস্থান জানান দেন চার ব্রিটিশ এমপির মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ আফসানা বেগম। পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসন থেকে তিনি টানা দুবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলি করে ছাত্র-জনতা হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যের সম্পত্তির বিষয়ে তদন্তের জন্য দেশটির সংশ্লিষ্ট দপ্তরেও চিঠি লিখেন আফসানা বেগম। তবে নীরব ছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক। এ বিষয়ে তিনি নানা সময় প্রশ্নের মুখোমুখি হলেও কৌশলে তা এড়িয়ে গেছেন। 

আফসানার মতো জুলাইয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাকি দুই এমপি রুশনারা আলী ও রুপা হক। যার যার অবস্থান থেকে সরব ছিলেন তারা। বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তোলেন পার্লামেন্টেও। গত বছরের এই দিনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রুশনারা আলী। সে সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি দেখছি, এতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আমার সহকর্মীরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং প্রতিবাদ করার স্বাধীনতার অধিকারকে সম্মান করার গুরুত্ব দিতে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। আমি জানি এরকম পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এই আসনের এমপি হিসেবে আমি সবাইকে বলছি, এখানের কোনো নাগরিকের বাংলাদেশে অবস্থানরত পরিবারের কোনো সদস্য যদি বর্তমান পরিস্থিতি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে জানাবেন। অন্য আসনের নাগরিকদেরও বলছি, এরকম পরিস্থিতিতে আপনাদের এমপির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করুন। এটি খুব জরুরি, এটি অত্যন্ত উদ্বিগ্নের সময়।’

চলতি বছরের জুনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, ব্রিটিশ বাংলাদেশি তিন এমপি রুশনারা আলী, রুপা হক আফসানা বেগম। টিউলিপ সিদ্দিক নানা প্রচেষ্টার পরও দেখা পাননি উপদেষ্টার।

সম্প্রতি ব্রিটেনের অভিবাসন নীতি নিয়েও একমত হতে পারেননি ব্রিটিশ বাংলাদেশি এমপিরা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সাম্প্রতিক কঠোর অভিবাসন নীতি নিয়ে ভিন্নমতে রয়েছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি চার এমপি। ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মনোনয়নে নির্বাচিত এই চার এমপি অভিবাসী পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্ম হলেও এ বিষয়ে তাদের অবস্থান একমুখী নয়।

গর্ভপাত বিল নিয়েও তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভক্তি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বিতর্কিত ভোটাভুটিতে ২৪ সপ্তাহের পর গর্ভপাতকে অপরাধমুক্ত করার একটি সংশোধনী বিল নিয়ে ব্রিটিশ মুসলিম ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপিদের মধ্যে স্পষ্ট মতভেদ দেখা গেছে। এ মতপার্থক্য মূলত তাদের ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের মধ্যকার সূক্ষ্ম দ্বন্দ্বকে সামনে নিয়ে এসেছে, বিশেষত যখন সংশোধনীটি ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বিবেচিত হয়। আফসানা বেগম, রুপা হক ও টিউলিপ সিদ্দিক সাধারণত গর্ভপাত বৈধকরণের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিপরীতে রয়েছেন, রুশনারা আলী। তিনি মূলত ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিক উদ্বেগকে গুরুত্ব দিয়েছেন।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার ব্রিটিশ এমপির এমন বিভক্তিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটি। কমিউনিটি নেতা আকবর আলী বলেন, ‘বাংলাদেশি কমিউনিটি অধ্যুষিত এলাকা থেকে তাদের অনেকেই নির্বাচিত হয়েছেন। তারা আমাদের গর্ব। তাদের মধ্যে বিভক্তি কমিউনিটিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। তারা যদি একই দলের হয়ে এমন বিরুদ্ধাচরণ করেন ভবিষ্যতে কমিউনিটির মানুষ তাদের নির্বাচিত করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগবেন। আমাদের দেশের স্বার্থে তাদের তেমন কিছুই করার থাকবে না। আমাদের আশা, উন্নত বিশ্বে রাজনীতি করা আমাদের গর্ব এই চার কন্যা সব মতবিরোধ ভুলে একই পথে হাঁটবেন’।