ঢাকা শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫

বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্টারলিংকের যাত্রা শুরু

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ১২:৪৯ এএম

‘দুর্গম পাহাড়, চরের জনপদ কিংবা ব্রডব্যান্ড-বঞ্চিত সীমান্ত’Ñ যেখানে এখনো পৌঁছেনি ফাইবার অপটিক, সেসব অঞ্চলের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেল। আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা ‘স্টারলিংক’।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বোর্ডরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত স্টারলিংকের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলও উপস্থিত ছিল। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন স্টারলিংকের ব্যবসা পরিচালনা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার এবং আন্তর্জাতিক কৌশল ও সরকারি সম্পর্ক পরিচালক রিচার্ড গ্রিফিথস।

সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও উদ্যোগে বাংলাদেশে স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে সেবা দিতে শুরু করেছে। এটি শুধু প্রযুক্তিগত নয়, বরং আমাদের দেশের ডিজিটাল কাঠামোর জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

অন্যদিকে স্টারলিংক শুধু ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী নয়, বরং স্পর্শকাতর এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেটের লাইফলাইন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সফররত স্টারলিংয়ের ব্যবসা পরিচালনা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার। বাংলাদেশে স্টারলিংকের যাত্রা শুরুর মাধ্যমে টেলিমেডিসিন, শিক্ষাসহ নানাবিধ সুবিধার নতুন দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

লিখিত বক্তব্য পাঠ করে লরেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা (অধ্যাপক ইউনূস) এবং তার প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাতেই হয়, কারণ তিনি বাংলাদেশের জনগণের জন্য নজিরবিহীন এক সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। ১৫০টি দেশ ও অঞ্চলে স্টারলিংকের কার্যক্রম আছে। আপনাদের নেতৃত্ব নতুন প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেছেন। উচ্চগতির ইন্টারনেট এখন আর কল্পনা নয়। স্টারলিংক এখন ইন্টারনেটের ‘ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড রিলায়েবল লাইফলাইন’, যেমন বন্যা, সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা দিতে সক্ষম স্টারলিংক। 

লরেন আরও বলেন, আমরা শুধু স্যাটেলাইট চালু করছি না, বরং টেলিমেডিসিন, শিক্ষাসহ নানান সুবিধার নতুন দুয়ার উন্মোচন করছি। অন্যদের জন্য অনুকরণীয় জাতি আপনারা। নিজেদের জীবনের উন্নয়নে মানুষ স্টারলিংক ব্যবহার করবে। এ দেশের মানুষ স্টারলিংক ব্যবহার করে কীভাবে তাদের জীবনযাত্রার বৈপ্লবিক পরিবর্তন করছে, সেটি দেখতে আমরা মুখিয়ে আছি। আর দ্রুততম সময়ে স্টারলিংককে কার্যক্রম শুরুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে দেওয়ায় বাংলাদেশের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’-এর প্রশংসা করেন রিচার্ড গ্রিফিথস।

লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে সংবাদ সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন স্টারলিংকের দুই কর্মকর্তা। এরপর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়ব বলেন, ইন্টারনেট শাটডাউনের ঠিক ৩৬৫তম দিন আজকে। ইতিমধ্যে স্টারলিংকের অর্ডার নেওয়া শুরু হয়েছে। আজ তারা তাদের অভিজ্ঞতা আনুষ্ঠানিকভাবে বিনিময় করলেন। আগে ‘সফট লঞ্চ’ হয়েছিল, তাদের উপস্থিতিতে স্টারলিংক সেবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলো। 

এক বছর আগে ঠিক আজকের দিনে বাংলাদেশ ডিজিটাল ডার্কনেসে পড়েছিল। নতুন শুরু করলাম। স্টারলিংকের মাধ্যমে পরিষ্কার বার্তা দিতে চাই যে, বিশ্বের সাথে আমাদের জনগণের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার দুঃসাহস যেন আর কেউ না করে। নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট শুধু একটা সুবিধা না, অধিকার। স্টারলিংক বাংলাদেশের প্রতিটি স্থানে থাকবে, বিশেষ করে দূরবর্তী তৃণমূল এলাকায়। আজ বাংলাদেশ কানেক্টেড এবং এটা আর কখনও ডিসকানেক্টেড হবে না। 

সংবাদ সম্মেলনে চলমান টেলিযোগাযোগ নীতিমালা সংস্কারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অবশ্য সেগুলোর উত্তর দেননি ফয়েজ তৈয়ব। এই নীতিমালা কবে নাগাদ চূড়ান্ত হতে পারে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি তিনি। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমাদুর রহমানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।