ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫

স্যার দেরিতে আসেন বলায় শিক্ষার্থীদের পেটালেন শিক্ষক

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ০৭:২৫ এএম
শিক্ষার্থী

স্যার দেরিতে ক্লাসে আসেনÑ এ কথা বলায় জয়পুরহাটের কালাই ময়েন উদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একই ক্লাসের ৩৩ জন ছাত্রকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক নাফসি তালুকদারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, তার বিরুদ্ধে কথা বললেই দেওয়া হয় নানা রকম হুমকি। এ ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়াসহ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাটের কালাই ময়েন উদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাফসি তালুকদার। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি স্থানীয় শিক্ষক ফোরামের প্রভাবশালী নেতা। বিগত সময়ে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা ছিলেন তিনি। সেই প্রভাব খাটান স্কুলসহ সব জায়গায়।

অভিযোগ রয়েছে, সময়মতো তিনি স্কুলে আসেন না। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই দেওয়া হয় নানা রকম হুমকি। গত মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে ক্লাসে আসার সময় এক ছাত্র বলেন, স্যার দেরিতে ক্লাসে এসেছেন। এ কথা শোনামাত্রই নবম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রকে প্রথমে হাত দিয়ে মারধর করেন। পরে বেত এনে মোট ৩৩ জন ছাত্রকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এতে কয়েকজন ছাত্রের পিঠ ও হাত কেটে যায়। এ ঘটনায় বিদ্যালয়সহ এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয় উত্তেজনা। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা দ্রুত বিচার চায়।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদ্যালয়ে দেরি করে আসার কথা বলামাত্রই আমাদের মারধর শুরু করেন। আমাদের পিঠে, হাতে বিভিন্ন জায়গায় কেটে গেছে। এরপর আমাদের বিভিন্ন রকম হুমকি দিয়েছেন ও গালাগালি করেছেন। বলেছেন, এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেবেন। কোথাও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কিছুই করতে পারব না বলে জানান। আমরা নাফসি স্যারের শাস্তি চাই।’

অভিযুক্ত শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদার বলেন, ‘আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। এ কারণে আমার একটু দেরি হয়েছে। নবম শ্রেণির ক্লাসের শিক্ষার্থীরা আমাকে দেখে বাজে কথা বলছে। এ কারণে ওই ক্লাসের সব শিক্ষার্থীকে শাসন করেছি। আমার স্কুলের ছাত্রদের আমি কি মারতে পারব না?’ ক্লাসে ঠিকমতো না আসা এবং নিয়মকানুন না মানার ব্যাপারে জানতে চাইলে, ‘সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বুঝবেন’ বলে দ্রুত চলে যান। 

প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম বকুল বলেন, সোয়া ১০টায় বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়। সহকারী শিক্ষক নাফসি তালুকদারের সপ্তম শ্রেণিতে পাঠদান ছিল। নাফসি তালুকদার প্রায় আধা ঘণ্টা দেরিতে ১০টা ৪০ মিনিটে সপ্তম শ্রেণির কক্ষে যাচ্ছিলেন। এ সময় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাকে দেখে বলে, স্যার আজকেও দেরিতে শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছেন। নাফসি তালুকদার এ কথা শোনার পর সপ্তম শ্রেণিতে না গিয়ে নবম শ্রেণিতে এসে ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করেছেন। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তাদের নির্দেশনায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’ 

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, তিনি স্কুলের নিয়মকানুন মানেন না, নিজের মতো করে চলেন। তাকে অনেকবার সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করেন না।

এ ব্যাপারে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা আক্তার জাহান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে মিটিং চলাকালীন প্রায় ৩৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়ে শিক্ষক নাফসি তালুকদারের বিরুদ্ধে তাদের এলোপাতাড়ি মারধরের অভিযোগ করে। মিটিংয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সবার সিদ্ধান্তক্রমে ওই শিক্ষককে শোকজ করার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে শোকজ দেওয়া হয়েছে শোকজের জবাব পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।