ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক

জ্বালানি, সার, চাল ক্রয় ও অবকাঠামো প্রকল্প অনুমোদন

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ১১:৪৫ পিএম

রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে দরপত্র ছাড়াই ২৮ লাখ ৫ হাজার টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ তেলের ক্রয় কার্যক্রম সরকারি ক্রয় পদ্ধতির আওতায় ২০২৬ সালের জন্য সম্পন্ন হবে।

গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ২০১৬ সাল থেকে জ্বালানি তেলের মোট চাহিদার অর্ধেক জিটুজি (সরকারি চুক্তি) ভিত্তিতে এবং অর্ধেক উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি করে আসছে। ২০২৬ সালের জন্য জিটুজি ভিত্তিতে আমদানি করা হবে ১৯ লাখ ১০ হাজার টন গ্যাস অয়েল, ৩ লাখ ৯০ হাজার টন জেট এ-১, ১ লাখ ৭৫ হাজার টন গ্যাসোলিন (অকটেন), ৩ লাখ টন ফার্নেস অয়েল এবং ৩০ হাজার টন মেরিন ফুয়েল। এই পরিমাণে মোট ২৮ লাখ ৫ হাজার টন জ্বালানি তেল ক্রয় করা হবে। জিটুজি ভিত্তিতে এভাবে ৮টি দেশের ১০টি প্রতিষ্ঠান থেকে তেল সরবরাহ করা হবে।

বৈঠকে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি চট্টগ্রামের জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল) প্রবেশপথ নির্মাণের জন্য ২০৮ কোটি ৯৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬২২ টাকার ব্যয়ও অনুমোদন দিয়েছে। এটি জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত হবে। টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৭টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়, যার মধ্যে সর্বনি¤œ দর প্রস্তাব দেয় মনিকো লিমিটেডকে এবং তাদের কাছ থেকে কাজ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধনের জন্য খুলনা বিভাগের ৫টি নতুন ৩৩/১১ কেভি ১০১০/১৪ এমভিএ জিআইএস টাইপ বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাবও অনুমোদন পেয়েছে। উন্মুক্ত দরপত্রে ৪টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে দুই প্রতিষ্ঠান কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ। টিইসি’র সুপারিশ অনুযায়ী সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ১৪০ কোটি ৭৭ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৭ টাকায় কাজ ক্রয় করা হবে।

সরকার রাশিয়া, মরক্কো ও সৌদি আরব থেকে এক লাখ পাঁচ হাজার টন সার আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে ব্যয় হবে ৬৬৪ কোটি ৪০ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪০ টাকা। এদের মধ্যে রয়েছে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া, ৪০ হাজার টন ডিএপি এবং ৩৫ হাজার টন এমওপি সার। এ ছাড়া বরগুনায় ১০ হাজার টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি বাফার গোডাউনের নির্মাণকাজও অনুমোদন পেয়েছে।

সাবিক অ্যাগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির জন্য প্রতি টন ৪১৩.৩৩ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। মরক্কো থেকে ডিএপি সার ৪০ হাজার টন আমদানির জন্য প্রতি টন ৭৩৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে এবং রাশিয়া থেকে ৩৫ হাজার টন এমওপি সার ক্রয়ের জন্য প্রতি টন ৩৫৫.৩৬ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এভাবে দেশের সার মজুত বৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জিত হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র ও জিটুজি ভিত্তিতে দুবাই ও মিয়ানমার থেকে এক লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে ৫০ হাজার টন আতপ চাল এবং দুবাই থেকে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানি হবে। এতে মোট ব্যয় ৪৪৬ কোটি ২৩ লাখ ৮ হাজার ৫৭০ টাকা। নন বাসমতি সিদ্ধ চালের দাম প্রতি টন ৩৫৫.৯৯ মার্কিন ডলার এবং আতপ চালের প্রতি কেজি দাম ৪৫.৮৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

উপদেষ্টা কমিটির এই সিদ্ধান্ত দেশের সরকারি খাদ্য মজুত বৃদ্ধির পাশাপাশি জরুরি পরিস্থিতিতে খাদ্য সরবরাহ সচল রাখার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বিদ্যুৎ খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সার আমদানি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবায়নবিষয়ক অন্যান্য প্রস্তাবের অনুমোদন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির এই বৈঠক সরকারের অব্যাহত অর্থনৈতিক কর্মকা- ও জনসাধারণের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।