ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

জুলাই শহিদকন্যা  ধর্ষণ মামলায় তিন  কিশোরের কারাদণ্ড 

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম

পটুয়াখালীর দুমকীতে জুলাই শহিদকন্যা লামিয়া ধর্ষণ মামলায় তিন কিশোরকে ১০ বছর করে বিনাশ্রম কারাদ- দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় পর্নোগ্রাফি আইনে দুই আসামিকে আরও তিন বছর করে কারাদ- দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার সকালে পটুয়াখালী জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিলুফার শিরিন এ রায় ঘোষণা করেন। দ-প্রাপ্ত আসামিরা হলেনÑ সাকিব মুন্সী (১৭), সিফাত মুন্সী (১৭) ও ইমরান মুন্সী (১৭)। রায় ঘোষণার পর তাদের যশোর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার নথি ও আদালত সূত্রে জানা যায়, নিহত জসিম উদ্দিন ছিলেন ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা এবং এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চালক। তিনি ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন এবং ২৯ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরদিন পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার আলগি গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এর প্রায় আট মাস পর, চলতি বছরের ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি ফেরার পথে জসিম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়াকে একই গ্রামের তিন কিশোর, সাকিব, সিফাত ও ইমরান জোরপূর্বক নির্জন বাগানে নিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। সেই সময় আসামিরা ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চুপ থাকতে বলে। পরদিন লামিয়া নিজে বাদী হয়ে দুমকী থানায় মামলা করেন। তদন্তের পর পুলিশ সাকিব ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে যশোর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠায়। পরবর্তী তদন্তে ইমরানের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় ৬ মে তাকেও অভিযুক্ত করে পুলিশ।

তবে ঘটনার এক মাস পর, ২৬ এপ্রিল রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় লামিয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পরিবারের দাবি, মানসিক চাপ ও সামাজিক অপমানে লামিয়া আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। পরদিন তাকে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়। ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত বলে রায় ঘোষণা করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন। এ রায় ন্যায়বিচারের এক দৃষ্টান্ত।’ তবে লামিয়ার পরিবার রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। লামিয়ার দাদা আ. সোবাহান বলেন, ‘এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। আসামিদের ফাঁসি হলে ভবিষ্যতে কেউ আর এমন অপরাধ করার সাহস পেত না।’