বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দীর্ঘ দেড় বছরের আলোচনার পর অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি এখন চূড়ান্ত ধাপে। দুই দেশের মধ্যে সমন্বিত বাণিজ্য সম্পর্ক, পণ্যের শুল্কসুবিধা, সংবেদনশীল তালিকা, প্রযুক্তি সহযোগিতা, সেবা খাতের ব্যাপক অঙ্গীকার ও ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গঠিত ২১টি ওয়ার্কিং গ্রুপের নেগোসিয়েশন করা টেক্সট এবং পণ্যের প্রস্তাবিত তালিকা পর্যালোচনাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২৭ নভেম্বরের ওই কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) আয়েশা আক্তার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা সবকিছু চূড়ান্ত করে এনেছি। তার পরও চুক্তির আগ পর্যন্ত কোনো কিছুই চূড়ান্ত বলা যাবে না। কারণ, স্বাক্ষরের আগেও দেখা যাবে কিছু না কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হতে পারে। আর চলতি ডিসেম্বর বা আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।’ সবকিছু নিয়েই দুই দেশের মধ্যে চিঠি চালাচালি অব্যাহত আছে বলেও তিনি বলেন।
জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো একটি অতি উন্নত অর্থনৈতিক শক্তির সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির বাস্তব প্রস্তুতিতে প্রবেশ করল।
এই চুক্তি বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী শুল্কসুবিধা স্থায়ীভাবে ধরে রাখার অন্যতম পথ এটি। জাপানি বিনিয়োগÑ বিশেষত যানবাহন, যন্ত্রাংশ, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্রযুক্তি খাতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার বৈচিত্র্যকরণে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। সেবা খাতে নতুন বাজার সৃষ্টিতে বাংলাদেশের দক্ষ জনশক্তির জন্য সুযোগ বাড়াবে। এবং চুক্তিটি বাংলাদেশের বাণিজ্যনীতিকে আধুনিক করে বহুপাক্ষিক বাণিজ্যকাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য আনবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গত দেড় বছর ধরে বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির আলোচনায় দেশজুড়ে প্রায় সব মন্ত্রণালয় সক্রিয়ভাবে জড়িত থেকেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধি এবং বাণিজ্য আলোচনাকারী কমিটির সদস্যদের মেধা আর শ্রমে আজকের এই পর্যায়ে এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই চুক্তি কেবল একটি নীতিগত দলিল নয় বরং বাংলাদেশের শিল্পায়ন, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, কৃষি রপ্তানি, নতুন বাজারে প্রবেশাধিকার, বিনিয়োগ-প্রবাহ এবং নীতিগত আধুনিকায়নের একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠামো।’
জানা গেছে, এই চুক্তিতে পণ্যের বিস্তারিত প্রস্তাব তালিকা তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে কোন পণ্যে তাৎক্ষণিক সুবিধা, কোনগুলো সংবেদনশীল, সেটিও চিহ্নিত করা হয়েছে। এ হিসাবে বাংলাদেশের শুল্ক তালিকায় ৭ হাজার ৪৩৬ এবং জাপানের তালিকায় ৯৩৫৪ পণ্য স্থান পেয়েছে। আর উভয় দেশের ৮০ শতাংশ পণ্য ও ৯৫ শতাংশ আমদানি মূল্য এই চুক্তির আওতায় আনবে।
দুই দেশই আলোচনার নীতিমালা অনুযায়ী নিজেদের শুল্ক তালিকার ৮০ শতাংশ পণ্য এবং ৯৫ শতাংশ আমদানিমূল্য এই চুক্তির আওতায় আনবে। এর আওতায় বাংলাদেশ ১ হাজার ৩৯টি পণ্যে চুক্তি স্বাক্ষর সাপেক্ষে তাৎক্ষণিক শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদানের অঙ্গীকার করেছে।
বাংলাদেশ পর্যায়ক্রমে শুল্ক হ্রাসের সুবিধা দেওয়ার জন্য বি-৫ শ্রেণিতে ১ হাজার ১৮৮ পণ্য। বি-৪ শ্রেণিতে ১ হাজার ৫১৪ পণ্য। বি-১০ শ্রেণিতে ৮৪ পণ্য। বি-১২ শ্রেণিতে ২৫ পণ্য। বি-১৫ শ্রেণিতে ১ হাজার ৬৩৫ পণ্য। বি-১৮ শ্রেণিতে ৩৯৭ পণ্য এবং জাতীয় শিল্প, কৃষি, ক্ষুদ্র উৎপাদন ও রাজস্বের বিষয় বিবেচনায় ১ হাজার ৪৭৪ পণ্য সংবেদনশীল তালিকায় রাখা হয়েছে। যেগুলোতে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রযোজ্য হবে না।
জাপানের প্রস্তাব অনুযায়ী যেসব পণ্যে তাৎক্ষণিক সুবিধা দেবে টোকিও, সেসব পণ্যের প্রস্তাব তালিকায় রয়েছে- বি-৩ শ্রেণিতে ১টি পণ্য, বি-৫ শ্রেণিতে ৭টি, বি-৭ শ্রেণিতে ৪২টি, বি-১০ শ্রেণিতে ৩৫২টি এবং বি-১৫ শ্রেণিতে ১০৭টি। এ ছাড়া, পুনঃআলোচনার তালিকায় ৯০৬টি পণ্য, বিশেষ শর্তাধীন তালিকায় একটি পণ্য এবং সংবেদনশীল তালিকায় ১ হাজার ৯৫৯ পণ্য রয়েছে।
জানা গেছে, জাপান তাদের প্রধান রপ্তানিপণ্য যাত্রীবাহী গাড়ির শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চাইলে বাংলাদেশ তা গ্রহণ করেনি। উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ পণ্যে শুধু সমমানের সুবিধা (অর্থাৎ, শুল্ক বজায় রেখে নির্দিষ্ট সুবিধা) দেওয়া হবে। যদিও বাংলাদেশ আরও ৮১টি পণ্যে সমমানের সুবিধা প্রদানে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ যন্ত্রাংশকে ১২ বছর মেয়াদি পর্যায়ক্রমিক সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা উপস্থাপন করে।
এদিকে জাপানি সমাজে চামড়া ও জুতা পণ্যের সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা থাকায় জাপান কোনো দেশকেই তাৎক্ষণিক সুবিধা দেয় না। সে কারণেই বাংলাদেশ এসব পণ্যকে ভবিষ্যৎ আলোচনার জন্য পুনঃআলোচনার তালিকায় রেখেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের কয়েকজন প্রতিনিধি মত দেন, কৃষিপণ্যে জাপানকে সরাসরি বা পর্যায়ক্রমিক সুবিধা দিলে বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিনিয়োগের নতুন জানালা খুলবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কৃষিপণ্য প্রতিটি দেশের জন্যই সংবেদনশীল, তবে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সুবিধা আদায়ের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে এবং ভবিষ্যৎ আলোচনায়ও এই খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সেবা খাত শ্রেণিবিন্যাসে রয়েছে প্রায় ১৫৫টি উপখাত। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশ ৫৫টি উপখাত নিয়ে আলোচনা শুরু করে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ৯৩টি উপখাতে সেবা প্রদানের অঙ্গীকার করে। বাংলাদেশের অনুরোধে জাপান অতিরিক্ত ৯টি যুক্ত করে সর্বমোট ১২৯টি উপখাতে সেবাসুবিধা দেয়।
দীর্ঘ আলোচনার পর বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেÑ পণ্যের বর্ণনা অনুযায়ী শুল্কসুবিধা প্রযোজ্য হবে। কেবল বর্ণনানুসারে নির্দিষ্ট পণ্যের ক্ষেত্রেই শুল্কসুবিধা কার্যকর হবে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ বিষয়ে বিশেষ আদেশ জারি করবে।
পণ্য ও সেবা খাতে বিনিময়কৃত চূড়ান্ত প্রস্তাব তালিকার ওপর সব মন্ত্রণালয় সম্মতি দিয়েছে।
দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক
বর্তমানে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ জাপানে প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে আর আমদানি করে প্রায় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। রপ্তানির প্রধান খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও হালকা প্রকৌশল পণ্য।
অন্যদিকে, জাপান বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগে (এফডিআই) অন্যতম বড় অংশীদার। বর্তমানে ৩৫০টিরও বেশি জাপানি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করছে, যার মধ্যে অনেকগুলো রয়েছে ইপিজেডে (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল)। জাপানের আর্থিক সহায়তায় নির্মাণ হচ্ছে মেট্রোরেল, গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্র। ইপিএ কার্যকর হলে এই বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
পেছনের কথা
২০২৩ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার নয়াদিল্লি সফরের পর মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প এবং ঢাকার উত্তরে ছোট রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) বাংলাদেশকে ১১২ কোটি ডলার নতুন ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। মহাসড়কসহ ত্রিপুরা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত শত শত কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ ও উন্নয়নে অর্থায়ন করছে জাইকা। মাতারবাড়ী প্রকল্পের আওতায় আছে খননের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম গভীর নৌবন্দর নির্মাণ এবং কক্সবাজারে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্প পার্ক নির্মাণ।
সেখান থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার রাস্তা উন্নত হলে ঢাকা ও বাংলাদেশের অন্যান্য অংশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য থেকে পণ্য পরিবহন সহজতর হবে। সুমিটোমো করপোরেশন, তোশিবা ও আইএইচআই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে।
পরে এপ্রিলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে বৈঠকের জন্য জাপানে যান। তখন এক যৌথ বিবৃতিতে ২০১৪ সালে দুই দেশের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত অংশীদারত্বকে পরবর্তী ৫০ বছরের জন্য ‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’ উন্নীত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।
অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ এবং এর আশপাশের অঞ্চলের উন্নয়নে ‘স্বচ্ছ ও ন্যায্য’ অর্থায়নের মাধ্যমে উচ্চমানের অবকাঠামো নির্মাণের দিকে গুরুত্ব দিয়েছেন তারা। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের ক্ষেত্রে লজিস্টিক, জ¦ালানি ও শিল্পের দিকগুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে সহযোগিতার কথাও বলা হয়েছে।
২০২২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকীতে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট উদ্যোগের অধীনে অগ্রগতি এবং বাংলাদেশের প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন ৬-এর উদ্বোধনে উভয় রাষ্ট্রপ্রধানই তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন-৬ নির্মাণে সহযোগিতা করেছিল জাইকা। জাপান বাংলাদেশকে সাইবার সিকিউরিটিতে তার দক্ষতাও দেবে।
২২ জানুয়ারি ঢাকা সফরকালে জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরা বলেন, জাপান পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি করতে চায়। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ায় অনুকূল শুল্কব্যবস্থা চালু হয়েছে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে জাপান বাংলাদেশকে বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার ক্ষেত্রে বৃহত্তম দাতা দেশ ছিল। কিন্তু জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ২০১৪ সালে এই সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। উন্মুক্ত ইন্দোপ্যাসিফিক ধারণাও তার সৃষ্টি।
ওই বছরের মে মাসে টোকিওতে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ বৈঠকে জাপান-বাংলাদেশ সমন্বিত অংশীদারত্বের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছিল। বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট নির্মাণসহ ভবিষ্যৎ প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা করতে জাইকার প্রেসিডেন্ট এরপর জুন মাসে বাংলাদেশ সফর করেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতা, উন্নয়ন সহায়তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করতে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে শিনজো আবে বাংলাদেশ সফর করেন। টেক্সটাইলের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং উৎপাদন মূল্য শৃঙ্খলে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ এরই মধ্যে বন্দর ও পানি নিয়ন্ত্রণ সুবিধা, সড়ক, রেলপথ, সেতু, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা প্রচার করছে। বৈদেশিক সাহায্য অব্যাহত রেখে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং আরও অবকাঠামো চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল জাপান।
জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেশ। রপ্তানির চেয়ে আমদানি প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের মাঝারি আকারের বাণিজ্য অংশীদার হচ্ছে জাপান। তবে অবকাঠামো, নকশা ও নির্মাণ পরিষেবাগুলোর ক্ষেত্রে জাপানই বাংলাদেশের বৃহত্তম সরবরাহকারী দেশ।
জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা চীনের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা কমাতে পারে। পাশাপাশি ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে সাজানোর সুযোগও দেয়। জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর জাপানের সঙ্গে এই ভারসাম্যমূলক চুক্তি বাংলাদেশের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

