ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

মনোনয়নপত্র বিতরণের  সময় বাড়ায় নির্বাচন পেছানোর শঙ্কা

মাইনুল ইসলাম রাজু, রাবি 
প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০৭:০৮ এএম
রাকসু নির্বাচন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ দিন বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্র আবাসিক হল থেকে একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর, ভোটার তালিকায় ছবি সংযুক্তি ও সাইবার বুলিং রোধে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে নির্বাচন ঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে ‘শঙ্কা’ দেখা দিয়েছে। তবে নির্বাচন পেছানো হবে কি না সে আলোচনা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। 

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সিদ্ধান্ত জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম। এদিকে মনোনয়ন ফরম বিতরণের সময় বাড়ানোয় প্রতিবাদ করেছেন বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর বেশ কিছু দাবি ও ছাত্রদলের দুই মাস সময় চাওয়ার ‘অনুরোধের’ পরিপ্রেক্ষিতে আজ নির্বাচন কমিশনের জরুরি সভা বসে। দুপুর ২টায় শুরু হওয়া এই সভা বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এর আগে দুই দফায় বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করেছে নির্বাচন কমিশন।

সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ছাত্রসংগঠনগুলোর বিভিন্ন দাবির বিষয়ে আজ (গতকাল) দুপুর থেকে জরুরি সভা হচ্ছে। সভা এখনো শেষ হয়নি। আমরা ইতিমধ্যে বেশকিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচন পেছানো হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি, আলোচনা অব্যাহত আছে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্র আবাসিক হল থেকে একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর, ভোটার তালিকায় ছবি সংযুক্তি ও সাইবার বুলিং রোধে একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তন, ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত ও ডোপটেস্ট করতে ৪-৫ দিন সময় লাগবে এবং নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে মনোনয়ন বিতরণের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তপশিলের পরবর্তী সময়গুলোতে পরিবর্তন আসতে পারে। আমাদের সভা এখনো শেষ হয়নি। সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় প্রয়োজন।’

ফরম বিতরণ

গত তিন দিনে ভিপি পদে মনোনয়নপত্র বিতরণ হয়েছে মোট ১৫৭টি। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের বিভিন্ন পদে ১৩৮টি এবং সিনেট ছাত্র প্রতিনিধিতে ১৯টি ফরম বিতরণ হয়েছে। এর মধ্যে ভিপি পদে ৬টি, জিএস পদে ৪টি, এজিএস পদে ৬টি, ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে ৩টি, সহকারী ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে ২টি, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে ৩টি, সহকারী সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে ১টি, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ৩টি, সহকারী মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে ২টি, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে ৬টি, সহকারী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে ৪টি, মিডিয়া ও প্রচার সম্পাদক পদে ২টি, সহ-মিডিয়া ও প্রচার সম্পাদক পদে ৩টি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ২টি, সহকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে ৪টি, বিতর্ক ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক পদে ১টি, সহকারী বিতর্ক ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক পদে ৪টি, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে ৬টি এবং সহকারী পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদসহ ৮টি পদে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া কার্যনির্বাহী সদস্য পদে ৩১টি ফরম বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পদহীনভাবে বাম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সম্মিলনে গঠিত প্যানেল ২৩টি এবং ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সচেতন শিক্ষার্থী নামের প্যানেল ১০টি ফরম পদ উল্লেখ না করে সংগ্রহ করেছে। এ ছাড়া আরও ৩ জন পদ উল্লেখ না করে ফরম সংগ্রহ করেছেন। তবে ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ অন্যান্য সম্ভাব্য প্যানেলের কোনো পদপ্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি।

মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেনি ছাত্রদল, শিবির

গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ সম্ভাব্য প্যানেলের কোনো পদপ্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। তবে ২টার দিকে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা মিলে রাকসুর ২৩টি ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ৫টি পদে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এরপর ৩টার দিকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ১০টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে। তবে কে, কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা জানাননি তারা।

সময় বাড়ানোয় প্রতিবাদ 

নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ও নির্বাচন পেছানোর আলোচনার সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীরা। তারা ১৫ সেপ্টেম্বরই নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে তারা ‘এক দফা এক দাবি, ১৫ তারিখে রাকসু দিবি’, অবৈধ সিন্ডিকেট, মানি না মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যে সাজানো নাটক মঞ্চস্থ করেছে, তাতে ১৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচন আয়োজন নিয়ে আমরা শঙ্কিত। নির্বাচন কমিশনের অযোক্তিক সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেনে নেবেন না।’

আচরণবিধি লঙ্ঘন 

রাকসুর আচরণবিধির ২(খ) অনুযায়ী, ‘মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের সময় কোনো ধরনের মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। প্রার্থী পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন না।’ তবে অধিকাংশ প্রার্থীই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে দল বেঁধে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।