ঢাকা রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫

ইসরায়েলের কারাগারে নির্যাতনে দৃষ্টি হারান ফিলিস্তিনি যুবক মাহমুদ

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৫, ১০:০০ এএম
ফিলিস্তিনি যুবক মাহমুদ আবু ফাউল। ছবি- সংগৃহীত

ইসরায়েলে আট মাস আটক থাকার পর ফিলিস্তিনি যুবক মাহমুদ আবু ফাউল তার মায়ের কণ্ঠস্বর শুনতে পান। কিন্তু মায়ের মুখ দেখতে পান না। কারণ ইসরায়েলি কারাগারে আটক থাকার সময় তাকে এমনভাবে নির্যাতন করা হয় তিনি তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এর আগে ২০১৫ সালে ইসরায়েলি বোমা হামলায় পা হারান আবু ফাউল।

সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ খবর জানা যায়। 

মাহমুদ আবু ফাউল বলেন, কারাবাসের সময় তাকে অবিরাম নির্যাতন করা হতো। অন্যান্য বন্দিরা যাকে ‘মানুষ ভাঙার কারাগার’ হিসেবে বর্ণনা করে এমন একটি কারাগার, সাদে তেইমান কারাগারে, আবু ফাউল বারবার মারধর ও নির্যাতন সহ্য করেছেন।
তিনি বলেন, একদিন রক্ষীরা তার মাথায় এমন জোরে আঘাত করে যে, তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। যখন জ্ঞান ফিরে পান, তখন আবিষ্কার করেন যে, তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেছে। মাহমুদ বলেন, আমি চিকিৎসার জন্য বারবার অনুরোধ করছিলাম, কিন্তু তারা আমাকে কেবল এক ধরনের চোখের ড্রপ দিয়েছিল, যা কোনো কাজ করেনি। আমার চোখ দিয়ে ক্রমাগত পানি ঝরত, ব্যথা হতো। কিন্তু কেউ পাত্তা দিচ্ছিল না।


 
তিনি বলেন, চিকিৎসার দাবিতে তিনি অনশন ধর্মঘটের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তার দাবিতে সাড়া দেয়নি। উত্তর গাজার ২৮ বছর বয়সি আবু ফাউলকে ডিসেম্বরের শেষের দিকে বেইত লাহিয়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ইসরায়েলি আটক কেন্দ্রে রাখা হয়। 

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে এই সপ্তাহে মাহমুদকে মুক্তি দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে সেখানকার কারাগার থেকে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পান। যাদের অনেকের শরীরে নির্যাতনের দৃশ্যমান চিহ্ন রয়েছে। তাদের মধ্যে একজন মাহমুদ আবু ফাউল।

অবশেষে যখন মাহমুদকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং নাসের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, তখন তিনি তার পরিবারের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। একপর্যায়ে তার মা এসে পৌঁছান। তিনি বলেন, যখন আমি মায়ের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম, আমি তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। কিন্তু আমি তাকে দেখতে পেলাম না। কেবল তার কথা শোনাকে পুরো পৃথিবীতে মূল্যবান মনে হচ্ছিল।

তিনি আরও বলেন, এখন ধ্বংসস্তূপের কাছে একটি তাঁবুতে থাকেন, এখনো তার চোখের চিকিৎসা হয়নি। চিকিৎসার জন্য বিদেশ ভ্রমণ করতে সাহায্য প্রত্যাশা করছেন তিনি।


 
সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানায়, তার বর্ণনা ইসরায়েলি কারাগারে পদ্ধতিগত নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান প্রমাণের সঙ্গে মিলে যায়। এই সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া অনেক ফিলিস্তিনিকে ক্ষীণকায় দেখা গেছে বা তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। আটকের সময় একজন বন্দির শরীরের ওজন প্রায় অর্ধেক কমে গিয়েছিল।

ফিলিস্তিনি মানবাধিকার কেন্দ্র ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবরের মধ্যে আটক ১০০ জন সাবেক বন্দির সাক্ষ্য নথিভুক্ত করেছে, যেখানে দেখা গেছে যে, কেবল সাদে তেইমান কারাগারের মতো কুখ্যাত স্থানগুলোতে নয়, ইসরায়েলি প্রায় সব কারাগারেই পদ্ধতিগত নির্যাতন চালানো হয়েছিল।

এ ছাড়া ইসরায়েলে আটক অবস্থায় মারা যাওয়া কমপক্ষে ১৩৫ ফিলিস্তিনি ব্যক্তির মৃতদেহ ফিরিয়ে দিয়েছে তেল আবিব। চিকিৎসা সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, তারা কিছু মৃতদেহের ওপর নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছেন এবং কিছুতে সম্ভাব্য মৃত্যুদণ্ডের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।