ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ওয়াজ আলী (৪৫) নামে রিকশাচালকের জমি বিক্রির সাড়ে চার লাখ টাকা না দিয়ে উল্টো মারধর করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।
রিকশাচালক ওয়াজ আলী জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার খাজুলিয়া গ্রামের মৃত সোহরাব আলী। টাকা আত্মসাৎ করা বিএনপি নেতার নাম আইন উদ্দিন। তিনি ফুলবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য।
গত ১৪ আগস্ট ওয়াজ আলী, সবুজ, জিয়াউর রহমান, ফজিম উদ্দিন, জাবেদ আলীসহ পাঁচজন মিলে এক একর ৪৩ শতাংশ জমি জিন্নত আলীর কাছে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
জমি বিক্রির পর সবুজ, জিয়াউর রহমান, ফজিম উদ্দিন, জাবেদ আলী তাদের টাকা ওইদিন বুঝে নেন। তবে রিকশাচালক ওয়াজ আলীর টাকা বিএনপি নেতা আইন উদ্দিন হাতে নিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় তার অফিসে আসতে বলেন। কিন্তু তার অফিসে এসে টাকা চাইলে উল্টো মারধর করেন। এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা চাইলে মেরে মরদেহ গুম করার হুমকি দেন এবং ওয়াজ আলীর জমি লিখে দেওয়ার দলিল পুড়িয়ে ফেলেন বিএনপির নেতা আইন উদ্দিন। এ অবস্থায় টাকা না পেয়ে গত ২৫ আগস্ট রাতে ওয়াজ আলী বাদী হয়ে ফুলবাড়িয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
সূত্র জানায়, জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার রিকশাচালক ওয়াজ আলী বিএনপি নেতা আইন উদ্দিন (৪৫), মো. রফিকুল উদ্দিন মাস্টার (৫৫) ও মো. জিয়াউর রহমানকে (৩৫) অভিযুক্ত করে ফুলবাড়িয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিবাদী মো. জিয়াউর রহমান একই গোষ্ঠীর লোক। বিবাদীরা ওয়াজ আলীর আত্মীয় হওয়ায় তাদের সাথে সম্পর্ক ভালো। সেই সম্পর্কের সুবাদে ওয়াজ আলীসহ জমির অংশীদার জিয়াউর রহমান, জাবেদ আলী, ফজিমুদ্দিন ও সবুজ মিয়াসহ আর্থিক প্রয়োজনে তাদের ভোগদখলীয় খাজুলিয়া মৌজায় দাগ নং-১১১২ এর ১ একর ৪৩ শতাংশ জমি বিক্রয় করার প্রস্তাব করলে ওয়াজ আলীসহ অংশীদাররা মিলে মো. জিন্নত আলীর কাছে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় জমি বিক্রি করেন। দরদাম করার সময় বায়না বাবদ ৬ লাখ টাকা দেয় জিন্নত। বাকি টাকা জমি দলিল সম্পাদনের সময় দিবে বলে জানায়।
পরে ওয়াজ আলীসহ অংশীদাররা জমি লিখে দেয়। লিখে দেওয়ার পর ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিবাদীদের হাতে তুলে দেয়। পরে রিকশাচালক ওয়াজ আলী তার ভাগের ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাইলে আইন উদ্দিন তার অফিসে গিয়ে টাকা আনতে বলেন। অফিসে টাকার জন্য গেলে আইন উদ্দিন তার অফিসের পেছনে নিয়ে ওয়াজ আলীকে মারধর ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। পরে ওয়াজ আলী কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন।
এরপর ওয়াজ আলী মোবাইল ফোনে টাকা দাবি করলে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে বলে, তার অংশের টাকা দেবে না, যদি পাওনা টাকা চাইতে যায়, তাহলে তাকে খুন করে মরদেহ গুম করে ফেলবে বা নিজেরাই যেকোনো অঘটন ঘটিয়ে তার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করবে।এ বিষয়ে জমির ক্রেতা জিন্নত আলী বলেন, আমি পাঁচজনের কাছ থেকে এক একর ৪৩ শতাংশ জমি সাড়ে ১৭ লাখ টাকায় ক্রয় করি এবং সম্পূর্ণ টাকা তাদের বুঝিয়ে দেই। কিন্তু বিএনপি নেতা আইন উদ্দিন রিকশাচালক ওয়াজ আলীর টাকা নিয়ে যায় এবং টাকা চাইতে গেলে আইন উদ্দিনকে মারধর করে টাকা দেবে না বলে জানায়। টাকা যেন দেওয়া না লাগে এজন্য আইন উদ্দিন ওয়াজ আলীর দলিল পুড়িয়ে ফেলেছে। দলিল পুড়িয়ে দেওয়ার ভিডিও আছে বলেও জানান তিনি।
রিকশাচালক ওয়াজ আলী বলেন, আমি একজন রিকশাচালক। রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। আমি জিন্নত আলীর কাছে জমি বিক্রি করেছি। সেই জমি বিক্রির টাকা বিএনপি নেতা আইন উদ্দিন নিয়ে গেছে। টাকা চাইতে গেলে উল্টো মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ অবস্থায় আমি অপারগ হয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছি। তা ছাড়া, আমাকে যেকোনো সময় মেরে ফেলতে পারে। আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
বিএনপি নেতা আইন উদ্দিন বলেন, ওয়াজ আলীর ওইখানে কোনো জমি নেই। সে জমিই লিখে দেয়নি। তাহলে তার টাকা কোথা থেকে আসবে। আমার বিরুদ্ধে এক পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে বলেও দাবি করেন তিনি।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. আজিজুর রহমান বলেন, আমি যতদূর জেনেছি, রিকশাচালক ওয়াজ আলীর জমি বিক্রির টাকা আইন উদ্দিন নিয়ে গেছে। একটি ভিডিওতে দেখেছি আইন উদ্দিন টাকা নিচ্ছে। এখন নাকি ওই রিকশাচালকের টাকা আইন উদ্দিন ফেরত দেয়নি।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতারুল আলম ফারুক বলেন, বিক্রি করা ওই জমিতে ওয়াজ আলীকে থাকতে দিয়েছিল। এখন ওই জমি নিজের বলে দাবি করছে। এটা সম্পূর্ণ ভুয়া, একটি পক্ষ আইন উদ্দিনের ক্ষতি করার জন্য এসব করছে।
ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রুকনুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি। দুই পক্ষকেই আমি ডেকে এনে কথা বলেছি। বিষয়টি সমাধান না হলে মামলা হবে।