মালয়েশিয়ায় ‘অপস বেলাঞ্জা’ নামে পরিচিত এক অভিযান। প্রায় সম্পূর্ণ লকডাউন করে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেই অভিযানে মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে ৭৭০ জন অনিবন্ধিত বিদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। এর মধ্যে ৩৯৪ বাংলাদেশি রয়েছে।
বড় ধরনের এই অভিবাসনবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে। রাজধানীর জনপ্রিয় নাইটলাইফ এলাকা বুকিত বিনতাংয়ে অভিযানের ফলে প্রায় সম্পূর্ণ লকডাউন জোনে পরিণত হয়।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত পরিচালিত এ অভিযানে পুত্রজায়া থেকে আসা ইমিগ্রেশন বিভাগের ১০৬ জন কর্মকর্তা অংশ নেন। অভিযানে নেতৃত্ব দেন দেশটির ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট পরিচালক বাসরি ওসমান।
অভিযান শুরু হওয়ার পরপরই বুকিত বিনতাংয়ের জালান নাগাসারি ও জালান সিলন এলাকার সব প্রবেশ ও প্রস্থানপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে পালাতে চাইলেও কোনো পথ খোলা ছিল না। মাত্র আড়াই ঘণ্টায় মোট ২ হাজার ৪৪৫ জনকে তল্লাশি করা হয়, যার মধ্যে ছিলেন ১ হাজার ৬০০ বিদেশি ও ৮৪৫ মালয়েশিয়ান নাগরিক। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। বাসরি ওসমান জানিয়েছেন, ৩৯৪ জন বাংলাদেশি পুরুষ ও দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমারের ২৩৫ জন, নেপালের ৭২ জন, ভারতের ৫৮ জন, ইন্দোনেশিয়ার ১৯ জন এবং আরও কয়েকটি দেশের মোট ৯ জনকে আটক করা হয়। তিনি আরও জানান, আটককৃতদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলোÑ মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা নিয়ে থাকা, বৈধ পরিচয়পত্র না রাখা এবং অনুমোদনবিহীনভাবে কাজ করা।
অভিযানের সময় অনেক অভিবাসী পালানোর চেষ্টা করেন। কেউ দোকানের টেবিলের নিচে লুকিয়ে পড়েন, কেউ গুদামে ঢুকে যান, আবার কেউ ভবনের ছাদে উঠে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাউকেই পালাতে দেওয়া হয়নি। বুকিত বিনতাং এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরেই অনিবন্ধিত অভিবাসীদের জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত। এখানে অসংখ্য দোকান ও ছোটখাটো ব্যবসা বিদেশিরা চালান, যা অন্য অভিবাসীদেরও টেনে আনে।
অভিযানের সময় কর্মকর্তারা একটি গোপন জুয়ার আড্ডাও খুঁজে পান, যেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো ছিল। সেখানে অনলাইন জুয়া খেলছিলেন কয়েকজন বিদেশি, তাদেরও আটক করা হয়। বাসরি ওসমান বলেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে এই এলাকায় নজরদারি চালানো হয়েছিল। জনসাধারণের নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই এত বড় অভিযান হাতে নেওয়া হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া সবাইকে প্রথমে পুত্রজায়ার ইমিগ্রেশন সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে তাদের পাঠানো হবে বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে। মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশন আইন ১৯৫৯/৬৩-এর একাধিক ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে তাদের পেছনের তথ্য ও কর্মসংস্থানের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।